ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত হেফাজত কর্মীদের চালানো ধ্বংসযজ্ঞের তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ মহপরিদর্শক-ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
দুই দিনের তাণ্ডবে ব্যাপক ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া অন্তত ২০টি স্থাপনা পরিদর্শন করতে সোমবার জেলা শহরে যান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ডিআইজি জানান, ত্রাস চালানোর প্রতিটি ঘটনায় মামলা হবে। আর সেগুলো তদন্ত করবে পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল। এ জন্য অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি ও বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআিইকে ডাকা হয়েছে।
গত শুক্রবার শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেল স্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে একজন নিহত হয়।
শনিবারও মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে মাদ্রাসা ছাত্ররা। তখন পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য চলে প্রাণ হারায় পাঁচ জন।
রোববারের হরতালে হামলা ছিল আরও ব্যাপক। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।
তিন দিনের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভাঙচুর ও আগুনের পাশাপাশি আগুন ও ভাঙচুর চালানো হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার সব স্থাপনায়
হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণ গ্রন্থাগার, সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতি বিজরিত সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ও মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানা।
- আরও পড়ুন: বেছে বেছে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনায় হামলা
পেট্রল ঢেলে দেয়ে আগুনে ভস্মীভূত পৌরসভা কার্যালয়, আলাউদ্দিন খা পৌর মিলনায়তন, জেলা পরিষদ কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত্ ভাষা চত্বর পরিদর্শন করেন ডিজাইজি। যান সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানাতেও।
তিন দিন মাদ্রাসা ছাত্রদের তাণ্ডবে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনা তদন্ত করবে তাদের তিন সদস্যের কমিটি। এর প্রধান করা গয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাহিকর হোসেনকে। তাদেরকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আইনি কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, ‘এখানে ২০টিরও বেশি ঘটনাস্থল রয়েছে। সব ঘটনাতেই মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। সিআইডি এবং পিবিআই বিশেষজ্ঞ দল ডাকা হয়েছে। তারা প্রতিটি ঘটনাস্থল ঘুরে আলামত সংগ্রহ করবে। প্রতিটি ঘটনার মামলা বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত করবে।’
মাদ্রাসা ছাত্রদের তাণ্ডবের সময় পুলিশের গুলিতে এই জেলায় নিহত হয়েছে মোট আট জন। তবে পুলিশ তাদেরকে প্রতিহত করেছে মোট তিনটি এলাকায়।
রোববারের হরতালে ২০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায় মাদ্রাসা ছাত্ররা
শুক্রবার যখন এসপি কার্যালয়ে হামলা হয় তখন পুলিশ গুলি করে। শনিবার হেফাজত কর্মীরা সুহিলপুরের নন্দনপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলা চালালে গুলি ছুড়ে পুলিশ। আর রোববারের হরতালে তারা গুলি চালায় পুলিশ লাইনস এলাকায়।
এর বাইরের কোনো ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। বরং রোববার হরতালে পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও আছে।
শুক্রবারের তাণ্ডবের পর রাতে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি। শনিবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেলেও রোববারের ত্রাস চলাকালে তাদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
শনিবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেলেও রোববারের ত্রাস চলাকালে তাদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি
তবে ডিআইজি বলেন, ‘ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশ নীরব ছিল না। সাধ্যমত চেষ্টা করেছে পুলিশ। যতটুকু পেরেছে পুলিশ করেছে। বাইরে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তবু এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’