বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচারপতিকে হুমকি দেন মাহসান স্বপ্ন

  •    
  • ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:২১

জিডিতে তুহিনকে অবাধ্য মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে বিচারপতি মো. শামসুল হুদা বলেছেন, মাহসান স্বপ্নর সঙ্গে আঁতাত করে তুহিন তাদের পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে পারে। প্রয়োজনে মামলা করবেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তুহিন সুলতানা তপুর বিতর্কিত ভিডিও আপলোড করার পর তার বাবা বিচারপতি মো. শামসুল হুদাকে হুমকি দিয়েছিলেন ভিডিও ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্ন।

রাজধানীর শাহবাগ থানায় বৃহস্পতিবার রাতে করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) এ কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

একপাক্ষিক ভিডিও প্রচার করার ঘটনায় ফেসবুক পেজ ‘মজার টিভি’র ভিডিও ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্ন ও তুহিন সুলতানা তপুর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও মানহানির অভিযোগ এনে এই জিডি করা হয়েছে।

এর আগে বিকেলে রাস্তায় ভিক্ষা করা ‘বিচারপতির মেয়ে’র বিতর্কিত ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন মাহসান স্বপ্ন। বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশের জন্য ক্ষমাও চান তিনি।

কিশোরী মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে তুহিনের আহাজারি করার ওই ভিডিও ১৪ জানুয়ারি আপলোড করার পর ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।

এই প্রতিবেদনে তুহিনের প্রতারণার সব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি অসংখ্য শেয়ার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিচারপতি মো. শামসুল হুদা বৃহস্পতিবার রাতে তুহিন ও মজার টিভির সিইও মাহসান স্বপ্নর বিরুদ্ধে ওই জিডি করেন।

এতে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত তুহিন আমার তৃতীয় মেয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ভিডিও আপলোড করে দেশের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য বাবদ টাকা আদায় করছেন।’

জিডিতে বলা হয়েছে, মজার টিভির মাহসান স্বপ্ন ফোন করে ভিডিও প্রত্যাহার করবেন জানিয়ে কৌশলে হুমকিও দিয়েছেন।

জিডিতে তুহিনকে অবাধ্য মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে বিচারপতি মো. শামসুল হুদা বলেছেন, মাহসান স্বপ্নের সঙ্গে আঁতাত করে তুহিন তাদের পরিবারের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে পারেন।

এসব কারণে প্রয়োজনে মামলা করবেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হাইকোর্ট বিভাগে ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. শামসুল হুদা। ২০১২ সালের ২ নভেম্বর আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে তিনি অবসরে যান। তবে বিচারপতি মো. শামসুল হুদাকে ২০১৩ সালে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এর এক বছর পর তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন-অর-রশিদ জিডি গ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের একজন অফিসার তদন্ত করবেন। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এর আগে বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে ফেসবুক লাইভে এসে বিতর্কিত ভিডিওটি আপলোড করার জন্য ক্ষমা চান স্বপ্ন।

তুহিনের ভিডিও আপলোডের ঘটনা বর্ণনা করে স্বপ্ন বলেন, ‘আমি হঠাৎ ধানমন্ডির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম একজন মহিলা অসহায়ভাবে রাস্তার পাশে বসে কান্নাকাটি করছে। আমি নেমে গিয়ে তার সাথে কথা বললাম। তিনি তার হাসপাতালের সমস্ত কাগজপত্র আমাকে দেখান। সেটি দেখে আমার মনে হয় মজার টিভির ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সকলকে জানিয়ে অসহায় এই মহিলার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করি।’

ভিডিওতে তুহিনের বাবা বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবারের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্বপ্ন। ভিডিওটি আপলোডের আগে বিচারপতি শামসুল হুদার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলেও তিনি জানান। তবে পরিবারের বক্তব্য কেন ভিডিওতে রাখা হয়নি সে বিষয়টি এড়িয়ে যান মাহসান স্বপ্ন।

ভিডিওতে স্বপ্ন স্বীকার করেন, তুহিন সম্পর্কে তার পরিবার অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের পক্ষের পুরোটা বক্তব্যই শুনেছি, কিন্তু এই মহিলাটি আসলেই অসুস্থ ছিলেন বলে আমি তাকে সহযোগিতা করার জন্য ভিডিও আপলোড দেই।’

তুহিনকে নিয়ে মাহসান স্বপ্নর আপলোড করা ভিডিওটি ভাইরাল হয় ফেসবুকে

স্বপ্ন তুহিনের একতরফা ভিডিও আপলোড করে আইন ভেঙেছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিল বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবার। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন বিচারপতি হুদা।

মাহসান স্বপ্ন বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাদের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও জানান তিনি।

তুহিনের ভিডিওর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পর্যন্ত পৌঁছেছে উল্লেখ করে, সবার কাছে ক্ষমা চান এই ভিডিও ক্রিয়েটর।

এ বিষয়ে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে মাহসান স্বপ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওই ভিডিও মজার টিভির ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে ফেলেছি। আপনি এই মুহূর্তে মজার টিভির পেইজে গেলে ওই ভিডিও আর দেখতে পাবেন না।’

স্বপ্ন বলেন, ‘আমি শুধু হাসপাতালের কাগজপত্র দেখে মহিলাকে (তুহিন) সাহায্য করেছিলাম, কিন্তু এই মহিলার পরিবারের এত অভিযোগ রয়েছে সেটি জানতাম না। তবে আমি পরিবারের সবার পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলাম। আমি তাদের সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ করেছি।’

একজন অসুস্থ নারীকে সাহায্য করতে গিয়ে বক্তব্য যাচাই করা ছাড়াই একজন ‘বিচারপতির মেয়ে’র পরিচয় কেন উল্লেখ করা হলো- জানতে চাইলে স্বপ্ন বলেন, ‘ওই মহিলা ভিডিওতে তার বিচারপতি বাবার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলায় আমি সেটিকে হাইলাইট করি। এর বেশি আর কোনোকিছুই আমি বলতে পারব না।’

ফেসবুকে তথ্য যাচাই না করেই ভিডিও আপলোডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিব না।’

এর আগে নিউজবাংলার অনুসন্ধানের সময় মঙ্গলবার সকালে মাহসান স্বপ্ন বলেছিলেন, ‘আমি সবই জানি (তুহিনের বাবার পরিচয়), কিন্তু কিছু বলব না। বেশ কিছুদিন যাবত আমার সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেই বিচারপতির ভয়েই এটি করতে হয়েছে।’

মাহসান স্বপ্ন ভিডিও প্রকাশের আগে বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা- সেটি জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বিচারপতি শামসুল হুদার আরেক মেয়ে শাহীন সুলতানা শান্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, সে আমাদের ফোন দিয়েছিল। আমরা তাকে জানিয়েছিলাম যে, ওই মহিলা ভুয়া। আমরা তার ডিটেইলস জানিয়েছি, কিন্তু সে (স্বপ্ন) ভিডিওতে আমাদের কথা বাদ দিয়ে আপলোড করে।

‘পরে আমরা আবার তার সাথে যোগাযোগ করলে সে কোনো রিপ্লাই দেয়নি। এখন আজ দেখলাম বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সে সেটি সরিয়ে ফেলেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর