বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কলাবাগানে কিশোরীর মৃত্যু, যা বলছেন দিহানের দারোয়ান

  •    
  • ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৪১

‘দিহান গাড়ি ছাড়াই বাইর হয়ে হাইটা গিয়া মেয়েটারে রিসিভ কইরা নিয়া আসে। এক লগেই দুইজন ঢুকছে, আমি কিছু বলি নাই। তারা চলে গেছে উপরে। বাসার মালিকের লহে ঢুকছে দেখে আমি আর কিছু জানতে চাই নাই।’

কলাবাগানের যে বাসায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার পালিয়ে যাওয়া দারোয়ান দুলাল হোসেনের খোঁজ মিলেছে তিন দিন পর।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলাবাগান থানায় নিয়েছে পুলিশ। দুলাল জানিয়েছেন, ঘটনার পর তিনি ভয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান।

গত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর পর তার বন্ধু ফারদিন ইফতেখার দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দিহান দাবি করেন, মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে গাড়িতে তোলার সময় দারোয়ান দুলাল সহযোগিতা করেন।

এই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন দুলাল, তবে রোববার রাতে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। দুলালের দাবি, তার বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও ঘটনার পর তিনি সাভারে চলে যান। এই কদিন তিনি সেখানেই ছিলেন।

সোমবার দুপুরে পুলিশ দুলালকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। দুলাল সঠিক সময় বলতে না পারলেও জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে দিহান মেয়েটিকে নিয়ে বাসায় ঢুকেছিলেন।

দুলাল বলেন, ‘দিহান গাড়ি ছাড়াই বাইর হয়ে হাইটা গিয়া মেয়েটারে রিসিভ কইরা নিয়া আসে। এক লগেই দুইজন ঢুকছে, আমি কিছু বলি নাই। তারা চলে গেছে উপরে।’

কেন কিছু জিজ্ঞেস করেননি, তার ব্যাখ্যা দেন দুলাল।

বলেন, ‘বাসার মালিকের লহে ঢুকছে দেখে আমি আর কিছু জানতে চাই নাই।’

-এরপর কী হলো?

দুলাল বলেন, ‘সাড়ে ১২টা একটার সময় মেয়েডারে কোলে কইরা গাড়ির পিছনের ছিডে উডায়া বাইরে নিয়া গেছে দিহান, আমি গেইট খুইলা দিছি।’

-কোলে করে নামানোর সময় মেয়েটার অবস্থা কেমন ছিল?

‘আমি দেখতাছি যে মেয়েডা বেহুঁশ, কোনো নড়নচড়ন নাই, একদমই বেঁহুশ আছিল। কোনো রক্ত-টক্ত আমি দেহি নাই, অল্প সময়ের কথা তো অত ভালোমতো দেহি নাই। এমনে পরনের কাপড়-চোপড় ঠিকই ছিল।'

মেয়েটিকে নামতে সহায়তা করার বিষয়ে আদালতে দিহানের বক্তব্য নাকচ করেছেন দুলাল।

-দিহান আপনাকে নাকি ফোন করে ফ্ল্যাটে ডেকেছিলেন? আর আপনি নাকি মেয়েটিকে নিচে নামতে সাহায্য করেছেন?

‘না, না আমি সাহায্য করি নাই। সে একাই কোলে করে নামাইছে।’

-দিহান বাসায় ডাকেননি?

দুলাল বলেন, ‘না, আমারে ডাকে নাই, আমিও যাই নাই। তারা এক-দেড় ঘণ্টা উপরে আছিল। এর মধ্যে কী অইছে আমি কিছুই জানি না। আমি শুধু গেইট খুলে দিছি আর কিছু করি নাই।’

-মেয়েটার কী হয়েছে জানতে চাননি?

‘না, মালিকের মেয়েলি ঘটনা আমি কেমনে জিজ্ঞাস করি? আমি তো তাদের চাকরি করি। আমার কি জানার সাহস আছে?’

-দিহান চলে যাবার পর কী হয়েছে জানতে উপরে গিয়েছিলেন বা কাউকে জানিয়েছিলেন ঘটনাটা?

‘না, আমি উপরেও যাই নাই, কাউকে জানাইও নাই। হেইডা আমার ভুল অইছে। আমি ভাবছি এইডা মালিকের বিষয়। আমরা ছোড মানুষ। কাউরে বললে আবার আমার চাকরি থাকে কি না।’

-দেড় ঘণ্টায় এত বড় ঘটনার কিছুই টের পাননি?

‘আমি গেইটে বইয়া আছিলাম, উপরে কী অইসে তা জানি না। কোন চিক্কুর বা আওয়াজও শুনি নাই।’

-আপনি তাহলে পালিয়ে গেলেন কেন?

‘আতঙ্কিত হইয়া। আমরা গ্রামের লোক না? ভয় পাইছি, পুলিশ দেইখা। আমি আগে থিক্কাই পুলিশ ভয় পাই। আমার ডিউটি শেষ অইছে দুইডায়। তখন গেইটে মোতালেব (বাড়ির অন্য দারোয়ান) ভাই আইছে। আমি বাসা থেইকা বাইর হইয়া রাস্তার মাথায় দাঁড়ায় আছি।

‘তখন মনে অয় তিনডা বাজে আরকি। দেখি পুলিশ আইছে। ওই দেইখাই আমার কলিজায় পানি নাই, হাডা ধরছি। দ্যাশে বউ বাচ্চা আছে, আমারে পুলিশে ধরলে তাদের কী হইব, সেই চিন্তা কইরা পলান দিছি।’

-পালানোর আগে জানতেন না যে মেয়েটা মারা গেছে?

‘না, আমি জানছি পলানের পরে। পুলিশ দেইখা দূর থেইকা আন্দাজ করছি কিছু একটা ঘটছে। টেলিফোনে এই এলাকার অন্য দারোয়ানরা আমারে জানাইছে, বলছে আমারে পুলিশ খুঁজে। তা শুইন্না আরও ডরাইছি।’

-তাহলে আবার ফিরলেন কেন?

‘আমার বাড়ির লোকজন, এরপর কমিটির লোকজন আমারে টেলিফোন দিয়া বুঝাইছে। কইছে তুমি তো কোনো অন্যায় কর নাই, তোমার কিছু হইব না। না আসলে পুলিশ সন্দেহ করব। তাই আইছি।'

-পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?

‘সাভারে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। অইখানে তো আমার কেউ নাই, কার কাছে যামু? তাই রাস্তায় রাস্তায় আছিলাম। বাড়ি যাই নাই। আমার জন্য যদি আবার বউ বাচ্চা বিপদে পরে সেই চিন্তায়।

দিহানের বাসায় এর আগে কোনো মেয়ে বন্ধু আসেনি বলেও নিশ্চিত করেন দুলাল হোসেন।

ঘটনার দিন মেয়েটি একাই সে বাসায় গিয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নের জবাব পেতে দুলালের বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুলালকে আটক করেছি। তাকে এখনি গ্রেপ্তার দেখাচ্ছি না, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর