পুলিশের বিরোধিতায় নারী চিকিৎসককে বিয়ে করে অপহরণের মামলার আসামি হওয়া আলোচিত নাপিতের জামিন আটকে গেল।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। যাকে অপহরণের অভিযোগ, সেই চিকিৎসক আদালতে বলেছেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন।
তারপরেও গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রফিকুল ইসলাম বাপ্পী।
বৃহস্পতিবার তাকে রংপুর কোতয়ালি আমলি আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেনের এজলাসে তোলা হয়। আইনজীবী নাজমা চৌধুরী বিউটি জামিনের আবেদন করে বলেন, ‘এই মামলা মিথ্যা। কোনো অপহরণ হয়নি। সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া পর্যন্ত জামিন দেয়া হোক।’
তবে বিরোধিতা করেন উপপুলিশ পরিদর্শক রাহেনুল ইসলাম। আর বিচারক জামিন না দিয়ে আগামী ২৮ জানুয়ারি আবার শুনানি নেয়ার সিদ্ধান্ত জানান।
রাহেনুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি অপহরণ মামলা, তাই আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি, আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
চিকিৎসককে না পেয়ে তার বাবা ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ রংপুর কোতয়ালি থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
থানা পুলিশ তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হলে তদন্তের ভার পায় রংপুর সিআইডি পুলিশ। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাদের অবস্থান জানতে পেরে সেখান থেকে গত ২২ ডিসেম্বর তাদের রংপুর নেয়া হয়।
পরদিন তাদেরকে নিয়ে রংপুর সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর সিআইডির উপপরিদর্শক ইউনুস আলী জানান, অপহরণের অভিযোগ সত্য নয়। তারা বিয়ে করেছেন। রংপুর সিআইডির সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাসও একই কথা বলেছেন।
তবে বাপ্পীর পেশাগত পরিচয় উল্লেখ করে তার সঙ্গে চিকিৎসকের বিয়ে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। দাবি করা হয়, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে নাপিতের বিয়ে হতে পারে না।
পরে দুই জনকে আদালতে তোলে সিআইডি। বিচারক দেলোয়ার হোসেনের এজলাসেও চিকিৎসক বলেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তারা বিয়ে করেছেন এবং সুখী আছেন।
তার বক্তব্য শোনার পর বিচারক ওই চিকিৎসককে নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন। আগের সংসারের সন্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান যে, তার বাবা যে কোনো সময় এসে তাকে দেখতে পারবেন। কিন্তু আটকে দেন বাপ্পীকে।
একটি অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমকে ওই নারী বলেন, ‘আমি জানি না কোর্ট কেন তাকে আটক করে দিল। আমি তো কোর্টে সাক্ষ্য দিয়েছি, সব বলেছি; তারপরও ওকে কেন আটক করল, আমি জানি না।’
এতসব ঘটনার পর বাপ্পীকে দিনের পর দিন কারাগারে থাকতে হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার আইনজীবী নাজমা চৌধুরী বিউটি। বিচারিক আদালতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় এখন উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে বিউটি বলেন, ‘আমরা আদালত থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ উত্তোলন করে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করব।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘বাপ্পী নির্দোষ। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে। কারণ, ভিকটিম (নারী চিকিৎসক) ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে তিনি অপহরণ হননি বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’
ডাক্তার-নাপিতের বিয়ে মানেন না সিআইপি এসপি- এই শিরোনামে নিউজবাংলা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালাচনা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি কমিটি করে।
এই ধরনের বক্তব্য দেয়ায় রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাপ্পীর আইনজীবী জানান, ওই নারী চিকিৎসকের প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তার মক্কেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। এরপর তারা বিয়ে করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করছিলেন। তাদের একটি সন্তানও হয়েছে। ওই নারী চিকিৎসকের আগের সংসারেও একটি সন্তান আছে।
মামলাটির প্রতিবেদন কবে আদালতে জমা দেয়া হবে, জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইউনুস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কাজ চালাচ্ছি, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দ্রুতই আমরা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব।’
- আরও পড়ুন: ডাক্তারকে বিয়ে করা সেই নাপিত জেলে
- আরও পড়ুন: নাপিত-ডাক্তারের বিয়ে মানেন না সিআইডি এসপি