আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লাকে তৃতীয় দফায় রিমান্ডে পাঠিয়ে আদালত জানিয়েছে, এই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে উচ্চ আদালতে নির্দেশ মেনে।
রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম অস্ত্র মামলায় তিন দিন এবং মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার মাদক মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান দুই জনকে।
আসামিদের পক্ষে শ্রী প্রাণনাথ জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ।
- আরও পড়ুন: রিমান্ডে সেলিমপুত্র ইরফান
এই আইনজীবী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আসামিরা অত্যন্ত ক্ষমতাধর। তারা জামিন পেলে সাধারণ নাগরিকের স্বস্তি-শান্তির বিঘ্ন ঘটাবে।’
রাষ্ট্রপক্ষ ও ইরফানের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালত হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে উচ্চআদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
গত ২৬ অক্টোবর হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করে র্যাব
আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। ২০১৬ সালে আপিল বিভাগ এই নির্দেশনা বহাল রাখে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদ হতে হবে কারাগারের অভ্যন্তরে স্বচ্ছ কাচনির্মিত বিশেষ কক্ষে। কাচের দেয়াল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আসামির আইনজীবী ও আত্মীয়-স্বজনদের সামনে হবে জিজ্ঞাসাবাদ।
- আরও পড়ুন: ইরফান সেলিম রিমান্ড শেষে কারাগারে
তদন্ত কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে তিন দিন হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।
জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
গত ২৬ অক্টোবর হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ পিস্তল, এয়ারগান উদ্ধার করে র্যাব
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গত ২৬ অক্টোবর গ্রেফতারের পর এর আগেও দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ইরফানকে।
গত ২৮ অক্টোবর তিন দিনের এবং গত ১ নভেম্বর দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয় ইরফানকে।
গত ২৬ জুন হাজী সেলিমের বাসায় র্যাবের অভিযানের দিন ইরফানের কক্ষ থেকে অনুমোদনহীন ওয়াকিটকি, লাইসেন্সহীন পিস্তল, অনুমোদনহীন এয়ারগান এবং অবৈধ মদ উদ্ধার হয়।
সেদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত ওয়াকিটকি রাখায় এক বছর আর মদ পানের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় ইরফানকে।
অবৈধ ওয়াকিটকি ও মদ রাখায় ইরফান সেলিমকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেয়া হয় গত ২৬ অক্টোবর
২৭ অক্টোবর ইরফান ও তার দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি করে চারটি মামলা করে র্যাব। ২৯ অক্টোবর এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন প্রত্যেকের ১৪ দিন করে রিমান্ড চান।
সেদিন আদালত ২ নভেম্বর শুনানির তারিখ ঠিক করেন। কিন্তু আসামিরা অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। তাই শুনানির তারিখ ঠিক হয় ৮ নভেম্বর।
সকালে ইরফান ও তার দেহরক্ষীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে আসামিদের অস্ত্র ও মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে আদালত। পরে হয় রিমান্ড শুনানি।