মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর আপিল বিভাগের রায় রিভিউয়ের আবেদন করেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।
মোট ১৮টি যুক্তিতে এই আবেদন করার কথা জানিয়েছেন মুসলিম লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা।
রিভিউ খারিজ হলেও অবশ্য নিজেকে রক্ষার আরেকটি পথ খোলা থাকবে এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন তিনি। যদিও এই আইনে দণ্ডিত কেউ এখনও রিভিউ বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় নিজেকে বাঁচাতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি করা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কায়সারের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমীন।
রিভিউ আবেদনের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন।
- আরও পড়ুন: যুদ্ধাপরাধী কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি
রিভিউ আবেদনে কী কী যুক্তি দেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন বলেন, ‘সৈয়দ কায়সারকে ১৫ নম্বর অভিযোগে নাসিরনগরে ১০৮ জনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই অভিযোগে আপিল বিভাগের আরেকজন বিচারপতি জিনাত আরা তাকে খালাস দিয়েছেন। একই অভিযোগে একজন বিচারপতি যেখানে খালাস দিয়েছেন, সেখানে অন্য বিচারপতিরা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
‘এছাড়া ১১ নম্বর অভিযোগে আপিল বিভাগ যে গ্রাউন্ডে খালাস দিয়েছে সেখানে ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।
‘অথচ দুটি ঘটনাই সৈয়দ কায়সারের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। ঘটনাস্থল থেকে দূরত্ব বিবেচনায় যেখানে এক অভিযোগে তিনি খালাস পান সেখানে আরেক অভিযোগে কী করে সাজা হয়’- এমন যুক্তি দেখান আইনজীবী।
আবেদনে বলা হয়, একজন সাক্ষীও নিহত একজনের নামও বলতে পারেননি।
৮০ ঊর্ধ্ব সৈয়দ কায়সারের বয়সও বিবেচনায় আনার আবেদন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি একজন অসুস্থ ব্যক্তি। বিচার চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে জামিন দেয়।
যাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে তো আর ফাঁসি দেয়া যায় না। এমন নজির বাংলাদেশে নাই’- বলা হয় আবেদনে।
সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে পর গত ২২ অক্টোবর কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ মুসলিম লীগের এই নেতাকে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণসহ সাতটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ধর্ষণে জন্ম নেয়া এক যুদ্ধ শিশুও সাক্ষ্য দেয় তার বিরুদ্ধে।
অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন: জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
আরেক জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে। এখন রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আনুষ্ঠানিকতা বাকি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত ৪১টি মামলার রায় দিয়েছে। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬টি।
তদন্ত সংস্থা এখনো ২৮টি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪০ জন।