বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবশেষে ধর্ষণের বিচারে গতি

  •    
  • ২৯ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:৩২

‘আমরা চিন্তা করছি, জজ চিন্তা করছেন, আসামিপক্ষ তো আর করবে না। ওরা তো লেংধি (দেরি) করতে চাইবে। আমরা চেষ্ট করছি যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলো শেষ করে দেওয়া। সরকারের আদেশের পর থেকেই মূলত এটি শুরু হয়েছে।’

নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাড়ে ১৬ বছর আগের ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি। আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

ময়মনসিংহে শিশুকে ধর্ষণের মামলায় সাড়ে সাত বছর পর রায়। এই আসামিরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

মানিকগঞ্জে আট বছর আগে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

ধর্ষণ মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে চলতি সপ্তাহে এমন তিনটি মামলার রায় এসেছে, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে ঝুলে ছিল।

এই তিনটি মামলার রায়ের পর জেলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণের পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলা ১৮০ দিনে নিষ্পত্তির বিধান আছে। তবে নানা কারণে বিচারে বিলম্ব হয়ে থাকে।

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় গড়ে উঠা আন্দোলনের পর সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করেছে। ১২ অক্টোবর সাজা বাড়িয়ে আইনে মন্ত্রিসভা সায় দেয়ার দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, তারা কেবল সাজা বাড়ানো হয়, মামলা নিষ্পত্তিতেও নজর দিচ্ছেন।

এরপর থেকেই বেশ কিছু আটকে থাকা মামলার রায় আসতে শুরু করে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের যেসব মামলা দীর্ঘ দিন ধরে বিচারাধীন, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিও বিভিন্ন সময় এসব মামলা দ্রুত শেষ করতে ডাইরেকশন (নির্দেশনা) দিয়েছেন। পুরানো মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে রায় দিতে বলা হয়েছে।’

 

নোয়াখালীর হাতিয়ায় ২০০৪ সালের এপ্রিলে করা ধর্ষণ মামলাটি ঝুলে ছিল সোয়া এক যুগ। দণ্ড পাওয়া আসামি মো. ইব্রাহীম সাড়ে ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে ব্যবসা করছিলেন। গত বছর তিনি ধরা পড়েন। তার পরেও বিচার আগায়নি।

 

তবে সম্প্রতি নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়। ২৮ অক্টোবর এই মামলার রায়ে আসামি ইব্রাহীমকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি মর্জুজা আলী পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রায় স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। তবে আমরা এখন পুরনো ধর্ষণ মামলাগুলোকে আরও বেশি গুরুত্বের সাথে দেখছি।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে জেলা প্রসাশকের সঙ্গে ধর্ষণ মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আগের বিভিন্ন মামলাগুলো যেনো দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার জন্য আমরা এখন অনেক বেশি সচেষ্ট।’

গত ২৭ অক্টোবর, শিশুকে ধর্ষণের মামলায় সাড়ে সাত বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় এসেছে ময়মনসিংহের একটি আদালত থেকে।

মামলা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল।

 

ময়মনসিংকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিশেষ পিপি বদর উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন আগের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি। নতুন আইন ঘোষণার পর থেকেই পুরাতন মামলাগুলোর দিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে।’

গত ১৪ অক্টোবর দিনাজপুরে রবি সরেন নামে এক তরুণকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছর আগের মামলায়।

জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) তৈয়বা বেগম বলেন, ‘করোনার জন্য ও সাক্ষী আনার বিষয়গুলোর কারণে এই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। তবে নতুন আইন পাস ও ওই সময় কিছু নির্দেশনার ফলে এখন ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কাজ চলছে।’

 

‘আমরা চিন্তা করছি, জজ চিন্তা করছেন, আসামিপক্ষ তো আর করবে না। ওরা তো লেংধি (দেরি) করতে চাইবে। আমরা চেষ্ট করছি যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলো শেষ করে দেওয়া। সরকারের আদেশের পর থেকেই মূলত এটি শুরু হয়েছে।’

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী মনে করেন, ধর্ষণ মামলায় তিনটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘সময়মত চার্জশিট দিতে হবে। সেখানে নিদির্ষ্ট করে সত্য কথা উল্লেখ করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিমকে দুর্বলপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার ফলে চার্জশিট ইচ্ছামত লেখা হয়।

‘কোর্টে ওভারবারডেন আর একটা বড় বিষয়। এই ওভারবারডেন এর কারণে নারী নির্যাতন মামলাগুলো পিছিয়ে যায়।

‘অনেকক্ষেত্রে আসামিপক্ষ টাকা দিয়ে আইনজীবী কিনে নেয়।’

পুরনো মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে একটা কমিটি করার পরামর্শও দিয়েছেন এই নারী অধিকার কর্মী।

সাম্প্রতিক ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের অংশ নেয়া ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অনিক রায় বলেন, কঠোর সাজা আর দ্রুত নিষ্পত্তি ছাড়াও আরও বেশ কিছু আইনি পরিবর্তন জরুরি।

 

ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইন ১৮৭৯ এর ১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ না করলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করেন অনিক।

ওই ধারায় বলা আছে, সাক্ষীকে ‘দুশ্চরিত্র’ প্রমাণ করে তার বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায়।

এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়া, তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগীকে মানসিক হয়রানি না করার বিষয়েও জোর দেন অনিক।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। ধর্ষণের পর ১২ জন নারী আত্মহত্যার তথ্যও পেয়েছে সংস্থাটি।

 

তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে চার হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে ৬০টি ঘটনায়।

এ বিভাগের আরো খবর