ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটি আমলে নিয়েছে আদালত। পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিআইবিকে দেয়া হয়েছে তদন্তের দায়িত্ব।
বুধবার দুপুরে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বাদীর পক্ষে মামলাটি করেন নুরদের বিরুদ্ধে আগেই তিনটি মামলার বাদীর আইনজীবী তাসলিমা কাওয়াকিবি তান্নি।
সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, আদালত পিবিআই এর কাছে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে।
গত রোববার ফেসবুক লাইভে এসে তাদের বিরুদ্ধে মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলে গালি দেন নুর। এর প্রতিক্রিয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আবার মামলা করেন ওই তরুণী।
নুরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং নুরসহ চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগে বাদী আরও তিনটি মামলা করেছেন।
নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আগেই তিনটি মামলা করা বাদী নতুন মামলাটি করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায়।
এই মামলা করার আগে থেকেই নুর আত্মগোপনে আছেন। তার একটি ফোন বন্ধ রেখেছেন, অন্য নম্বরে কল করলে ধরছেন না।
একই বাদী নুর ও তার সংগঠনের পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন গত ২০ সেপ্টেম্বর। এতে অভিযোগ করা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: নুরের ‘রুচিহীন’ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড়
নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই ঘটনার মীমাংসা করার কথা বলে পরে বাদীকে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, ঘটনাটি চেপে না গেলে অনলাইনে এসে পতিতা বলে অপপ্রচার চালাবেন।
পরে ২২ বাদী আরও দুটি মামলা করেন একই আসামির বিরুদ্ধে। এখানে অভিযোগ করা হয়, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নাজমুল হাসান সোহাগ তাকে হাসান আল মামুনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে ধর্ষণ করেছেন।
২৩ সেপ্টেম্বর একই আসামিদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ এনে আবার মামলা করেন বাদী।
নুরুল হক নুরদের গ্রেফতারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে অনশন করছেন বাদী। ছবি: মেরিনা মিতু
আসামিদের গ্রেফতাররে দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে অনশনে বসেন বাদী। এর মধ্যে রোববার রাতে দুই আসামি নাজমুল হুদা ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘ছবি-ভিডিও নেই’, তাই ‘ধর্ষণ হয়নি’
ওই রাতে নুর ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, ধর্ষণ হয়নি। যা হয়েছে সব সম্মতিতে। মেয়েটিকে এ সময় তিনি ‘দুশ্চরিত্রহীনা’ বলে উল্লেখ করেন।
নুরের এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এই বক্তব্যকে নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বাদীর অনশনস্থলে মঙ্গলবার সমাবেশও হয়েছে। সেখানে নুরসহ সব আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
নুরদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী বলেছেন, তার মামলা কেবল গ্রহণ করলে হবে না। নুর এবং তার সহযোগী অন্য সব আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আদালত অর্ডার দিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু গ্রেফতার কোথায়। আমি মনে করি, পুলিশ পারে না, এমন কোনো কাজ নাই। দেশের যেখানে থাকুক, ইচ্ছা করলে আধা ঘণ্টার মধ্যে ধরে ফেলবে-এটুকু বিশ্বাস আমার আছে।’
আইনে কী আছে
নুরের বিরুদ্ধে যে আইনে মামলা হয়েছে, তার ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ করলে অপরাধ হবে। এর শাস্তি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
২৯ ধারায় ওয়েবসাইটে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করলে অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ বা ঘৃণা ছড়ায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এ ধারার শাস্তি অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড ও অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।