পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব বৈসাবি। পাহাড়ে ৩ দিনব্যাপী চলবে বৈসাবির বর্ণাঢ্য আয়োজন। বৈসাবিকে ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি এলাকা এখন উৎসব মুখর।
বৈসাবি উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এ অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ শহরের রাজ বনবিহার সংলগ্ন রাজবাড়ি ঘাট, ত্রিপুরা অধ্যুষিত গ্রাম গর্জনতলী এলাকা, তবলছড়ি কেরাণী পাহাড়, আসামবস্তীসহ বিভিন্ন এলাকায় দলবেধে ১২ এপ্রিল বৈসাবির প্রথম দিন কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। খবর বাসসের।
বৈসাবি উপলক্ষে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এ সময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সাগরিকা রোয়াজা, ফাউন্ডেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বৈসাবি উপলক্ষে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বৈসাবি উৎসব নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, ‘বৈসাবি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরি করে। বৈসাবিতে শুধু পাহাড়িরা নয় এখানে হিন্দু, মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ভাইবোনরাও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়, এটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতির চর্চাসহ তাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে বলেই বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
রাজবনবিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোসহ বিভিন্ন কর্মসচির উদ্বোধন করেন বিজু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। এসময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বৈসাবি উপলক্ষে জেলার ১০ উপজেলায় এবার আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হচ্ছে বৈসাবির বর্ণাঢ্য বর্ণিল আয়োজন।
হ্রদে ফুল ভাসানোর পর বন থেকে নিমপাতা ও ফুল তুলে ঘর সাজানোর কাজে লেগে পড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীসহ সকলেই।
এদিকে বৈসাবি উৎসব পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ধর্মীয় উৎসব হলেও বৈসাবির ৩ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে পাহাড়ি, বাঙ্গালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মত। বৈসাবিতে সকল সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে উৎসব সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।
১৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দিন চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু বৈসু বা বিষু। এদিন তারা ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী পাজনসহ অন্যান্য পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্নার আয়োজন করে অতিথি আপ্যায়ন করেন।
আর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব। আগামী ১৬ এপ্রিল রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়াতে মারমাদের বৃহত্তম পানি খেলা উৎসবের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি হবে পাহাড়ের বৈসাবির উৎসব।
বৈসাবি উৎসবে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হোক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।