সূর্য ডুবে আলোকরেখা মিলিয়ে যেতেই কিন্তু সাবধান। বিদেহী আত্মারা ঘুরঘুর করবে আজ রাতে। ভূতের পাশাপাশি পেতনির হাতছানিতে হতে পারেন প্রলুব্ধ। আর একবার প্রলুব্ধ হলে দাম চোকানো কিন্তু বেশ কঠিন। তাই যেকোনো উপায়ে ৩১ অক্টোবর হ্যালোইন রাতে খারাপ আত্মা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
দূরে রাখার কৌশল হিসেবে ঘরের দরজা-জানালায় খিল আটকে ভেতরে বসে থাকলে হবে না, আপনার বেশ-ভূষায় আনতে হবে পরিবর্তন। ব্যাটম্যান, জোকার, ওয়ান্ডার ওম্যানের মতো কল্পিত চরিত্রে সাজিয়ে তুলুন নিজেকে। এতে প্রলোভন দেখাতে আসা খারাপ আত্মা নিজেই সংশয়ে পড়ে যাবে, আপনার মানুষ পরিচয় নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে সে।
নিজেকে আরও নিরাপদ করতে চাইলে জ্বালাতে পারেন লণ্ঠন। তাই বলে যেকোনো লণ্ঠন বা বাতি হলে চলবে না। প্রয়োজন পড়বে একটি পাকা কুমড়ার। ভেতরটা ফাঁপা করে নিয়ে সেখানে সলতে দিয়ে জ্বালতে হবে প্রদীপ। এতে আপনার ধারেকাছে ঘেঁষবে না কোনো ভূত বা পেতনি।
এ রকম নানা বিদঘুটে আয়োজনে আজ রাতে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হবে হ্যালোইন।
আজকে যা হ্যালোইন (Halloween) সেটির উদ্ভব ইউরোপের কেলটিক জনগোষ্ঠীর সোইন (Samhain) উৎসব থেকে। এখন থেকে ২ হাজার বছর আগে আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও উত্তর ফ্রান্স অঞ্চলে ছিল কেলটিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। আর তাদের নতুন বছরের উৎসব হতো ১ নভেম্বর।
এই দিনটিকে গ্রীষ্মকাল ও ফসল কাটা মৌসুমের শেষ হিসেবে বিবেচনা করত কেলটিকরা। এর পর থেকেই ঠান্ডা শীতের সূচনা, যে মৌসুমকে মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে মিলিয়ে বিচার করা হতো।
কেলটিকদের বিশ্বাস ছিল, নতুন বছরের আগের রাতে জীবিত এবং মৃতের জগতের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে। এ কারণে ৩১ অক্টোবর রাতে তারা উদযাপন করত সোইন উৎসব। কেলটিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে মৃতদের আত্মা নেমে আসে পৃথিবীতে।
কেলটিকরা বিশ্বাস করতেন, ৩১ অক্টোবর মৃত আত্মারা জীবিতদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করে। এ জন্য খারাপ আত্মাদের এড়াতে অদ্ভুত পোশাক আর নানা সাজসজ্জা নিতেন তারা। একই সঙ্গে এই রাতে আগুন জ্বালিয়ে পৃথিবী এবং আত্মিক জগতের সব বাধা দূর করতে চাইতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, এর মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মহাবিশ্বের সব বাসিন্দার আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়।
এর দীর্ঘকাল পরে ৪৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রোমান সাম্রাজ্য বেশির ভাগ কেলটিক অঞ্চল জয় করে ফেলে। পরের ৪০০ বছর এসব অঞ্চল শাসনের সময় রোমান উৎসবের মাঝে কেলটিকদের ঐতিহ্যবাহী সোইন উৎসবও জায়গা করে নেয়। ধীরে ধীরে সেই সোইন পরিবর্তিত হয়ে হ্যালোইন নাম ধারণ করে।
পুরোনো স্কটিশ ভাষায়, হ্যালো’য়েন (Hallowe’en) -এর অর্থ ‘অল হ্যালোস (হলি) ইভেন’। এর পূর্ণ অর্থ ‘অল হ্যালোস’ ইভেনিং’ বা ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। মধ্যযুগে ইউরোপে এটি পালন করা হতো ‘অল হ্যালোস ডে’ বা ‘পবিত্র দিন’-এর আগের সন্ধ্যায়। যেখানে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের সাধুদের সম্মানিত করার রীতি ছিল।
সময়ের পরিক্রমায় উৎসবটির নাম হয়েছে হ্যালোইন। বদলে গেছে বানান লেখার রীতিও।
ঐতিহ্য বা রীতি অনুযায়ী হ্যালোইনের সন্ধ্যায় পথে পথে কালো পোশাক পরা মানুষ রাস্তায় পায়চারি করেন। তাদের বেশভূষায় থাকে শোকের চিহ্ন। অনেকে মৃত আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আইরিশ এবং স্কটিশ অভিবাসীদের আগমন শুরু হলে উনিশ শতকে হ্যালোইন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হ্যালোইনের উৎপত্তি ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে এটি সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠেছে। এমনকি এ বছর সৌদি আরবে প্রথমবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে হয়েছে হ্যালোইন উৎসব।
হ্যালোইন এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ছুটির দিনে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে এই উৎসবে ব্যয় হয় ৬০০ কোটি ডলার। দিনটি ঘিরে কস্টিউম পার্টি এবং হরর মুভি দেখার মতো নানা আয়োজন থাকে দেশটিতে।