ঢাক, কাসর, শঙ্খ আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। এরই মধ্যে দিনাজপুর জেলায় শুরু হয়েছে আয়োজন। তবে গত দুই বছর করোনার মহামারির ধকল আর চলতি বছরের অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও তাতে কমে এসেছে বাজেটের পরিমাণ।
পূজা কমিটির সদস্যরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। চলতি বছর বাজারে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনুদানের পরিমাণও কমে এসেছে। ফলে কমেছে পূজার বাজেট।
প্রতিমা কারিগররা বলছেন, চলতি বছর কাজের পরিমাণ ভালো থাকলেও কম খরচে ভালো কাজ উপহার দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেকোরেটর শ্রমিকদেরও কথা একই রকম।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা ও মণ্ডপ প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডেকোরেটর শ্রমিক এবং প্রতিমা কারিগররা। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি রয়েছে মাটি চড়ানো ও রং-তুলির কাজ। অন্যদিকে মন্দিরের প্রবেশদ্বার প্রস্তুত করাসহ মণ্ডপের সাজসজ্জার কাজ করছেন ডেকোরেটর শ্রমিকরা।
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই পূজা চলবে দশমী অর্থাৎ আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
দিনাজপুর পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর জেলায় তিনটি মণ্ডপ বেড়েছে। গত বছর জেলায় ১ হাজার ২৬১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এবার ১৮টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় পূজা কমিটি থেকে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সমাবেশ এবং জেলায় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজায় প্রতিটি মণ্ডপে আনসারের পাশপাশি টহলে থাকবে পুলিশ ও র্যাব।
রাজবাড়ী জেলা থেকে দিনাজপুরে প্রতিমা তৈরির কাজ করতে এসেছেন অনুপ সরকার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২০ সালে প্রতিমা তৈরি করার জন্য দিনাজপুরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় করোনা থাকায় আসা হয়নি। ঈশ্বরের কৃপায় এবার এসে কাজ করছি। গতবারের তুলনায় সাড়া ভালো পেয়েছি।
‘এবার একটি বিষয় লক্ষ্য করছি। সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় এবার প্রতিমার সরঞ্জামের দাম বেশি। আর তাই খরচও বেশি। আবার অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, পূজার আয়োজকরা গত বছর যে কাজ ১০০ টাকায় করিয়েছেন, এবার সেই কাজ ৮০ টাকায় করাতে চাচ্ছেন। আবার করতেও হচ্ছে। কিন্তু কথা হলো ১০০ টাকার কাজ ৮০ টাকায় করে দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’
স্থানীয় প্রতিমা কারিগর স্বপন পাল বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর প্রতিমা তৈরি করে তেমন ভালো আয় হয়নি। এবার চিন্তা করলাম, ভালো কাজ হবে। কিন্তু এবার জিনিসের দাম বেশি। ফলে কম দামে ভালো কাজ প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা, যা দিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে। আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখছি না।’
ভুবন রায় নামে এক ডেকোরেশন শ্রমিক বলেন, ‘এবার দুটি কাজ ধরেছি। প্রতিটি দেড় লাখ টাকা করে। কিন্তু গতবার দুটি কাজ করেছি প্রতিটি ২ লাখ টাকা করে। এবার কাজ করতে গিয়ে একটাই সমস্যা: আয়োজকরা বলছেন, কমের মধ্যে একটি ভালো কাজ চাই। আমরা পড়ছি দ্বিধায়। কাজের চাপ পূর্বের থেকে বেড়েছে। কিন্তু দাম বাড়েনি।’
সদর উপজেলার কাঁটাপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় দাস তিতুন বলেন, ‘গত বছর পূজার বাজেট ছিল ২ লাখ টাকা, আর এবার দেড় লাখ। কারণ এবার অনুদানের পরিমাণ কমে গেছে। গতবার যে ব্যক্তি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন, এবার তার ইচ্ছা থাকলেও সেই পরিমাণ টাকা দিতে পারছেন না। করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে পূজার বাজেট কমিয়ে আনতে হয়েছে। তারপরেও একটু চিন্তায় আছি, বাজেট অনুযায়ী অনুদান উঠবে কি না।’
দিনাজপুর পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার বলেন, ‘অনেকেই দেখা যায়, লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত প্রতিমা রাখে। সে ক্ষেত্রে আমরা সেটির দায়ভার নেব না। তারা যদি নিজ দায়িত্বে রাখতে চায় তবে রাখতে পারবে।’