বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোনটা ‘সিডাকশন’, কোনটা শুধুই তাড়না?

  •    
  • ৩০ আগস্ট, ২০২২ ১৭:৪৮

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ফ্লোরিডার অধ্যাপক এবং ফ্লোরিডা ব্লু সেন্টার ফর এথিক্সের পরিচালক সারাহ লাচ্যান্স অ্যাডামসের বক্তব্য অনুযায়ী, সিডাকশনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি ‘সুনির্দিষ্ট’। এর মানে রাস্তায় কারও পোশাক দেখে হরেদরে যৌন তাড়নায় ভোগা সিডিউসড হওয়ার লক্ষণ নয়, এটি আসলে এক ধরনের যৌন বিকৃতি।

নারীর ‘ছোট পোশাকের’ বিরুদ্ধে সম্প্রতি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। এসব মানববন্ধনে প্রদর্শন করা ফেস্টুনের স্লোগানগুলো একটি ছিল ‘ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন।’

কেমব্রিজ ডিকশনারিতে ‘সিডিউস’-এর অর্থ হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, যিনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম বয়সী বা কম অভিজ্ঞ, তিনি যখন আপনাকে তার প্রতি আকৃষ্ট বোধ করাতে এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উদ্দীপ্ত করেন।

আরেকটি অর্থে বলা হয়েছে, কাউকে এ রকম কোনো কিছু করতে প্ররোচিত করা যা তার কাছে সাধারণভাবে খুব একটা আকর্ষণীয় নয় এবং যেটি তিনি প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন না।

ক্রিয়াবাচক শব্দ ‘সিডিউস’-এর বিশেষণবাচক শব্দ ‘সিডাকশন’। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ফ্লোরিডার অধ্যাপক এবং ফ্লোরিডা ব্লু সেন্টার ফর এথিক্সের পরিচালক সারাহ লাচ্যান্স অ্যাডামস মনে করছেন, সিডাকশনের সঙ্গে যৌনতা ছাড়াও আরও অনেক কিছু জড়িত। সিডাকশন হতে পারে দুই ধরনের- ‘নৈতিক’ এবং ‘অনৈতিক’।

অনৈতিক সিডাকশনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত নিগ্রহের শিকার হতে পারেন, তবে সারাহর মতে নৈতিক সিডাকশনের রয়েছে ‘নতুন কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনা’।

সারাহ বলছেন, ‘চতুর্দিক থেকে আমাদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। সম্ভাব্য পার্টনারের তুলনায় অন্যদের মাধ্যমে আমরা অনেক বেশি সিডিউজড বা তাড়িত হই। রাজনীতিক, বিজ্ঞাপনদাতা, ধর্মীয় নেতা… সবাই আমাদের প্রলুব্ধ করেন এবং এসব সিডাকশন এক ধরনের নৈতিকতার মোড়কে ঢাকা থাকে।’

এক নিবন্ধে সারাহ সিডাকশনের ‘নৈতিক’ এবং ‘অনৈতিক’ দুটি দিকই বিশ্লেষণ করেছেন। সিডাকশন শব্দটির উদ্ভব লাতিন শব্দ সেডুকো (sēdūcō) থেকে। লাতিন ‘সে (sē)’ শব্দের অর্থ দূরবর্তী, আর ডুকো (dūcō) অর্থ চালিত করা। সব মিলিয়ে সেডুকোর বাংলা অর্থ হতে পারে ‘পথভ্রষ্ট করা’।

সারাহ বলছেন, অভিধান অনুযায়ী সিডাকশনের সঙ্গে প্রতারণা বা চাতুর্য জড়িত। বিশেষ কোনো কৌশলে কাউকে যৌন ক্রিয়াকলাপের মতো এমন কিছু করতে রাজি করানো, যা তিনি সাধারণভাবে হয়তো করবেন না। তার বক্তব্য অনুযায়ী, সিডাকশনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি ‘সুনির্দিষ্ট’। এর মানে হলো রাস্তায় কারও পোশাক দেখে হরেদরে যৌন তাড়নায় ভোগা সিডিউসড হওয়ার লক্ষণ নয়, এটি আসলে এক ধরনের যৌন বিকৃতি।

আরও পড়ুন: উত্তেজক পোশাকের নারীর শত্রু কেন নারীরাই

সিডাকশন সম্মতিমূলক, পারস্পরিক সিদ্ধান্তযুক্ত, এমনকি নৈতিকও হতে পারে বলে মনে করছেন সারাহ।

তিনি বলেন, ‘আধুনিক জীবনের আনুষঙ্গিক সবকিছুই আমাদের মধ্যে চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। ক্যাফের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় কফির সুবাস, সুন্দর কোনো শরীরিক গঠন এমনকি বিশেষ কোনো গানও মনকে আকুল করে তোলে।'

সারাহর দাবি, ‘ব্যবসায়ী, গোষ্ঠী নেতা, রাজনীতিকসহ আরও অনেকে আমাদের এই আকুল হওয়ার প্রবণতার সুবিধা নেন। তারা আমাদের যুক্তিকে বাতিল করে দিয়ে অর্থপূর্ণ সম্মতি দেয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিতে চান। তারা স্পষ্টতই আমাদের অর্থ, আমাদের আনুগত্য, আমাদের ভোট ও আমাদের যৌনতাকে নিজেদের করে নিতে চান।’

ফলে সিডাকশনকে কেবল নারী-পুরুষের যৌনতাকেন্দ্রিক বিষয় হিসেবে ধরে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি নারী-পুরুষের যৌনতার ক্ষেত্রে পোশাক সিডাকশনের একমাত্র হাতিয়ার নয়। বাস্তব জীবনে পুরুষ-নারী প্রত্যেকেই বিভিন্ন কৌশলে বিপরীত লিঙ্গকে যৌনতাড়িত বা সিডিউস করতে পারেন।

সারাহ বলেন, ‘জটিল বিষয় হলো, আমরা যে বস্তুগুলোকে কামনার বলে মনে করি, সেগুলোর ওপর আমাদের সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ সংস্কৃতি নিরপেক্ষ নয়। কামোত্তেজক আকাঙ্ক্ষাকে স্বাভাবিক, সহজাত এবং এমনকি সংগত বলে মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবার, ধর্ম, মিডিয়া ও বন্ধুরাই আমাদের প্রভাবিত করে৷’

আরও পড়ুন: শার্ট খোলা ছবি দিলেই আবেদন হারায় পুরুষ!

‘নৈতিক সিডাকশনের’ ব্যাখ্যায় সারাহ বলছেন, ‘একটি ওক গাছের বীজের উদ্দেশ্য থাকে মাটিতে পড়ার পর একটি ওক গাছে পরিণত হওয়া। এর সমস্ত ক্রিয়াকলাপ, যেমন শিকড় বের হওয়া, পুষ্টি সন্ধান করা- সেই লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, সিডাকশনের চূড়ান্ত লক্ষ্য (টেলোস) অস্পষ্ট।

‘নৈতিক সিডাকশন মূলত নিজের সঙ্গে বৃহত্তর ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে অন্যের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরির প্রচেষ্টা। তবে নৈতিক সিডাকশন নৈকট্যের আকাঙ্ক্ষা থেকে চালিত হলেও সেটি জানে না এর শেষ কোথায়। আর এ অনিশ্চয়তাই এই সিডাকশনের নৈতিকতার মান বাড়িয়ে দেয়।

‘কারণ কেউ আগে থেকেই যদি সিডাকশনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেললে (যেমন: তিনি শেষ পর্যন্ত ডেট করবেন বা যৌনতায় বাধ্য করেন বা বিয়ে করবেন), তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির কেবল একটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।’

‘অনৈতিক সিডাকশনেরও’ উদাহরণ দিয়েছেন সারাহ। তিনি বলেন, ‘কুখ্যাত পিক-আপ শিল্পীদের বিবেচনা করুন। তাদের স্পষ্ট উদ্দেশ্য: যত বেশি সম্ভব আকর্ষণীয় নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক। এ উদ্দেশ্য হাসিলে পিক-আপ আর্টিস্টরা কারও সঙ্গে দেখা করার সময় নিজেদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।

‘এরপর পর্যায়ক্রমে সাহসিকতা, বীরত্ব, উদাসীনতা, আধ্যাত্মিকতা, নারীবাদী ধারণা, সীমা লঙ্ঘন ও দুঃসাহসিকতার মতো নানা বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেন। তারা খুব হিসাব করে পোশাক পরেন, নিজেদের অঙ্গভঙ্গি, চাটুকারিতা, আবেগগত জালিয়াতিকে ব্যবহার করেন। তারা নারীর ওপর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে চান। নারীদের ‘লক্ষ্যবস্তুতে’ পরিণত করা তাদের অমানবিক করে তোলে। কথায় আছে, আপনার কাছে শুধু একটা হাতুড়ি থাকলে সব কিছুকেই আপনার পেরেক মনে হবে।’

আরও পড়ুন: যেকোনো পোশাকেই ‘বিজ্ঞানী হতে পারেন’ নারী

সারাহ বলেন, ‘সিডাকশন এমন প্রস্তবনা দেয় যে, এতে নতুন আনন্দ লুকিয়ে আছে। অন্যদিকে নৈতিক সিডাকশনের অর্থ হচ্ছে অন্যের ভাবনার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বীকৃতি দেয়া। তাদের মনোযোগ অনুসরণ করে তাদের সম্মানের যোগ্য হতে চাওয়া। তবে এটি ভবিষ্যৎ সুখ বা সফল যাত্রার নিশ্চয়তা দেয় না। আমরা এ ক্ষেত্রেও প্রত্যাখ্যান, হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো ঝুঁকিতে পড়তে পারি।

‘কোনো মানুষ যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান এবং নতুন যে ভবিষ্যৎ তৈরি করেন সেটি শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক নাও হতে পারে। প্রায়ই সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা হয়ে যায়। আমেরিকান তাত্ত্বিক লরেন্ট বারলান্টের মতে আমাদের আশাবাদ নিষ্ঠুর হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা প্রায়ই আমাদের জন্য কোনটা ভালো সেটা জানতে ভুল করি।’

সিডাকশনের বিষয়টি সাধারণত প্রলোভনকারীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। সিডিউসড হওয়া মানে নিজেকে হারানো। সিডাকশনের রোমান্টিক রূপটি হচ্ছে প্রেমে পড়া ও ডুবে যাওয়া। বিপরীতে, নৈতিক সিডিউসকারী কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে কাছে পেতে চান; তার দৃষ্টিভঙ্গি, অন্তর্দৃষ্টি সম্বন্ধে ধারণা জানতে চান।

নৈতিক সিডাকশন হলো নিজেকে প্রকাশ করা। এটা স্বেচ্ছায় বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকি। এখানে রয়েছে রোমাঞ্চ, বিপদ ও সৃষ্টির সম্ভাবনা। ভালো বা খারাপ যা-ই হোক, নৈতিক সিডাকশন থেকে নতুন কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর