বয়স বাড়লেও মনের জোর মানুষকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তারই প্রমাণ ৬৫ বছর বয়সী শ্যারন ম্যাকঅ্যালিস্টার।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কেশবিন্যাসের কাজ করে আসছেন ম্যাকঅ্যালিস্টার। তবে তিনি এর পরও বিশ্রামে যেতে চাননি। বরং নিজেকে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন নতুন কাজ দিয়ে।
শ্যারনের মেয়ে যোগব্যায়ামের শিক্ষক। তিনি যখন এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ নেন, শ্যারন সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এই ব্যাপারে মেয়েকে নিজেই উৎসাহিত করেন। কেশবিন্যাসের কাজে তিনি কয়েক দশক কাটান। ৬৫ বছর পার হওয়ার পর ভাবেন, তিনি কি নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন? নাকি তার নতুন কিছু করা উচিত।
এই ভাবনা থেকেই চারজন অপরিচিতের সঙ্গে স্পেনে ২৫০ ঘণ্টার যোগব্যায়াম কোর্স শেষ করেন। এরপর তিনি পূর্ব লন্ডনের এসেক্সে চলে আসেন। সেখানে যোগ্যব্যায়ামের প্রশিক্ষক হিসেবে এরই মধ্যে ১০টি ক্লাসও নিয়েছেন। শ্যারনের প্রশিক্ষক তাকে বলেন, 'আপনাকে আরও দক্ষ হতে হবে।
তিনি খেয়াল করেন, তার দেয়া প্রশিক্ষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সহকারীকে নিয়ে তিনি শবাসন, মৃতদেহের ভঙ্গিসহ সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেন। যেখানে শিক্ষার্থীদের মাথা, ঘাড় এবং কাঁধের সমন্বয়ে ব্যায়াম করতে শেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের স্পর্শ করে ব্যায়ামের পদ্ধতি বোঝাতে হয়।
শ্যারন বলেন, ‘কেশবিন্যাসের ক্যারিয়ার থেকেই আমি মানুষকে স্পর্শ করে অভ্যস্ত। এ জন্য আমার কাছে এই প্রশিক্ষণ দেয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই এটি আমি সহজেই লোকদের অফার করতে পারি।’
শ্যারনের বাবা তাকে ছোটবেলায় কেশবিন্যাসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ তিনি নিজেও এই পেশায় ছিলেন। বাবার কাছেই এই প্রশিক্ষণ নেন শ্যারন।
তিনি লন্ডন যেতে পছন্দ করতেন। সেখানে কালারিং কোর্স, অ্যাডভান্সড স্টাইলিংয়ের ওপর কোর্স করেন। তার বাবা অবসর নিলে তিনি শ্যারন সেলুনের দায়িত্ব নেন।
এই কাজে যখন তার ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে, সে সময় ২০০৮ সালে পড়ে গিয়ে শ্যারনের হাত ভেঙে যায়। তিনি চিরুনি ধরতে পারতেন না। পরে তিন মাসের জন্য তাকে সেলুন বন্ধ করতে হয়। সুস্থ হয়ে আসার পর তার বয়স তখন ৫৩। তিনি খেয়াল করেন বয়স তার কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেশবিন্যাসের জন্য লোকেরা আরও কম বয়সীদের খোঁজে। তখনই শ্যারন জীবনে অন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে যোগব্যায়ামের পাশাপাশি তিনি রান্নার কোর্স করেন। এরপর মিউজিক থেরাপি নিয়ে পড়তে চান। ধীরে ধীরে তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে।
শ্যারন বলেন, ‘ভেবে খুশি হই, আমি একজন যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক। যেখানে মানুষ আমাকে পেয়ে খুশি। তারা আমার ক্লাসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমি শুধু শারীরিকভাবেই না, মানসিকভাবেও যথেষ্ট সচল হয়েছি। এটাও আমার জন্য আশ্চর্যের।’