রাস্তায় নানা ভোগান্তি পার করে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গত কয়েকদিনে রাজধানী ছেড়েছে লাখো মানুষ। এত ভোগান্তি পার করে হলেও মানুষ বাড়ি ফিরছে।
তবে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে সবার বাড়ি ফেরা হয় না। অনেকে আছেন যাদের দুই ঈদের এক ঈদেও ছুটি মেলে না। কর্মস্থলেই তাদের কাটে সময়।
তাদের একজন মো. রেজাউল বিশ্বাস। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডের একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথে দেখা তার সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে তার জীবনের কাহিনি।
মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার পানিঘাটা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল। চার দশক গরুর ব্যবসা করে গত ১৫ বছর ধরে বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিতে কাজ করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এক ছেলে চার মেয়ে ও স্ত্রী আছে আমার। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে টাইলসের কাজ করে। ছোট মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। স্ত্রী বাড়িতেই থাকে।’
ঈদের আগের দিন ডিউটি করেছেন। নিশ্চয় গত ঈদ বাড়িতে কাটিয়েছেন- বলতেই রেজাউল বলেন, ‘না, না, গত ঈদেও ডিউটি করছি। ছুটি পাই নাই। বাড়িতে সবাই ঈদ করবে, আমি একা ঢাকায় থাকব।’
দুই ঈদের একটিতেও বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাননি জানানোর পর তার কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘খারাপ লাগে না?’
জবাবে রেজাউল তুললেন তার দায়িত্ববোধের কথা।
বলেন, ‘আমার পোস্ট কে দেখবে। ঈদে বুথ তো আর বন্ধ থাকে না। মানুষের টাকার দরকার আছে।’
কীভাবে সময় কাটে?
-‘আজকেও সাত-আট বার কথা বলছি বৌয়ের সঙ্গে। সে আছে নাতি-পুতি নিয়ে। আল্লাহ্র ইচ্ছায় দশ জনের ইচ্ছায় বেঁচে আছি।’
ঢাকায় থাকলেও বাড়িতে স্বজনদের জন্য কোরবানির পশু কেনা হয়েছে। রেজাউল বলেন, ‘আমার এক জামাই সৌদি থাকে। বাড়িতে কোরবানির জন্য এবার ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছে ছেলে আর জামাই মিলে। সবাই আছে বাড়ি শুধু আমি নাই। আজকেও তিন হাজার টাকা বাড়ি পাঠাইছি ঈদের দিন মিলাদের জন্য।’
দিনে ২৪ ঘন্টার ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করেন রেজাউল। আট ঘণ্টা নির্ধারিত ডিউটি আর বাকি সময় ওভারটাইম।
রেজাউল বলেন, ‘একটা বাসা নেয়া আছে। কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড মিলে একটা বাসা নিছি। ওইখানেই খাই। রাতে ডিউটি থাকলে এটিএম বুথের ভেতরেই ঘুমাই।’