প্রথম বাংলাদেশ ওয়্যারকোর্স স্মারক গ্রন্থ ‘মূর্তির ৬১ মুক্তির ৭১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় অনালাইনে যুক্ত থেকে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বীর উত্তম মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রনির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, তাজউদ্দীন আহমেদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শিক্ষাবিদ শারমিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা ট্রাস্টি ও সাহিত্য প্রকাশের পরিচালক মফিদুল হক এবং প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তানভীর মোকাম্মেল বলেন, ‘বইটি অশেষ গুণ, ৪৩০ পৃষ্ঠার বইটিতে অনেক কিছু রয়েছে। ভবিষ্যতে যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখবেন তাদের জন্য স্মৃতিচারণমূলক বইটি অনেক সাহায্য করবে। বইটি পড়ে যে কেউ উৎসাহিত হবেন। সেই সময়ের তরুণরা কী ভাবতেন, সেই সামাজিক অবস্থানও ফুটে উঠেছে এতে।’
শিক্ষাবিদ শারমিন আহমেদ বলেন, ‘বইটিতে যে কথাগুলো লেখা আছে সেটা আমাদের ইতিহাসের উপাদান। যারা সত্যের অনুসন্ধান করতে চান, জানতে চান তাদের জন্য বইটি, যারা ইতিহাসের চর্চা করেন, তাদের অনেক সাহায্য করবে।
‘আজকের তরুণ, যারা বইটি পড়বেন তারা আলোড়িত হবেন। বইটি পড়ে আমি সেই জনযুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
সেই সঙ্গে বইটি পাঠ্যক্রমে যুক্ত করারও দাবি জানান এই শিক্ষাবিদ।
বইটির বাংলা ও ইংরেজি দুটি সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশনা সাহিত্য প্রকাশ বের করেছে বাংলা, আর ইউপিএল প্রকাশ করেছে ইংরেজি সংস্করণ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সেক্টরে ট্রেনিংপ্রাপ্ত দক্ষ সামরিক অফিসার তৈরি করার জন্য ভারতে অবস্থানকারী বাঙালি তরুণদের বাছাই করে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৬১ জন ক্যাডেট নির্বাচন করা হয়। এই কোর্সটির নাম দেয়া হয় 'প্রথম বাংলাদেশ ওয়্যারকোর্স'। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল এই ৬১ জনের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত শিলিগুড়ি থেকে ৪০ মাইল দূরে মূর্তি নামক ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড স্টেশনে এদের ট্রেনিং শুরু হয় এবং ১৯৭১ সালে ৯ অক্টোবর পাসিং আউট প্যারেডের মাধ্যমে এরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক অফিসার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
পরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরে যোগদান করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ কোর্সের ৬১ জনের মধ্যে মোট ১৭ জন বীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, পাসিং আউট প্যারেডে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কমান্ডার সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল আতাউল গণি উপস্থিত ছিলেন ।
এ বইটিতে প্রথম বাংলাদেশ ওয়্যারকোর্সের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথা বর্ণিত হয়েছে।