বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদযাত্রা হয় না সামিরনের

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ১৭:১৩

সামিরন বলেন, ‘আমি আর কই যামু, আমার যাওয়ার জায়গা আচে নাকি? কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। মাইয়ার বিয়ে দিচি আক্কেলপুরে। ঈদের আগে মাইয়া আইচিল আমার কাচে। ঈদ কইরা এহন যাইতাচে। ট্রেনে তুইল্যা দিতে আইচি।’

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার চিত্র। ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বস্তা মাথায় ছুটে চলেছেন এক তরুণী ও মাঝবয়সী এক নারী। তরুণীর আঁচল ধরে পেছনে হাঁটছে বছর তিনেকের একটি ছেলে। পাশাপাশি হাঁটছে বছর দশেকের একটি মেয়ে। ওর কাঁধেও একটি ব্যাগ। তারা ছুটে চলেছে প্লাটফর্মে অবস্থান করা একতা এক্সপ্রেসের দিকে।

ছুটতে ছুটতে ট্রেনের মাঝামাঝি একটি বগিতে প্রথমে বাচ্চা দুটিকে তুলে দিলেন তারা। এরপর উঠলেন দুই নারী। ট্রেনের সিটে তিনজনকে বসিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালেন মাঝবয়সী ওই নারী। কথা বলছেন ট্রেনের জানালা দিয়ে। বিদায়ী আলাপন।

কথা বলতে চাইলে নিউজবাংলাকে জীবনের গল্প শোনালেন সামিরন।

৫৬ বছর বয়সী সামিরন জানালেন, কোথাও যাচ্ছেন না তিনি। বরং মেয়ে মনিরা, নাতি রাকিব ও নাতনি রুনাকে স্টেশনে বিদায় জানাতে এসেছেন। ওরা যাবে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে বিদায় জানাচ্ছেন সামিরন। ছবি: নিউজবাংলা

সামিরন বলেন, ‘আমি আর কই যামু, আমার যাওয়ার জায়গা আচে নাকি? কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। মাইয়ার বিয়ে দিচি আক্কেলপুরে। জামাই রুবেল হোটেলে কাম করে। ঈদের আগে মাইয়া আইচিল আমার কাচে। ঈদ কইরা এহন যাইতাচে। ট্রেনে তুইল্যা দিতে আইচি।’

সামিরন জানান, তার বাবার বাড়ি নাটোরের দাহিয়ায়। স্থায়ী বসতভিটা ছিল না তাদের। সেখানেই জন্ম তার। অভাব-অনটনের মধ্যে কেটেছে শিশুকাল।

কৈশোর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয় এক রিকশাচালকের সঙ্গে। ভেবেছিলেন, এবার হয়তো তার দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুচবে। সুখের সংসার হবে। তবে কোনোদিন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি সামিরনের। থেকেছেন বাবার বাড়ির এলাকাতেই।

দুই সন্তান জন্মের পর প্রায় বিশ বছর আগে সংসার ত্যাগ করে চলে যান তার স্বামী। আর খোঁজ নেননি স্ত্রী-সন্তানের। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, জানেন না সামিরন। দুই সন্তানকে বড় করতে গিয়ে স্বামীর খোঁজ করার ফুরসত মেলেনি তার।

স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর শুরু হয় সামিরনের আরেক জীবন সংগ্রাম। প্রথমে বাবার বাড়ির এলাকাতেই ছিলেন কিছুদিন। এরপর জীবিকার তাগিদে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমান ঢাকায়।

রাজধানীতে এসে মানুষের বাড়িতে সামিরন ঝিয়ের কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন আর কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করেই চলে সংসার। থাকেন কেরানীগঞ্জের বেড়াবাজার এলাকায়।

সামিরন বলেন, ‘মাইনষের বাড়ি কাম কইর‌্যা, সাহায্য চাইয়া ছেলেমেয়ে বড় করচি। মাইয়ার বিয়া দিচি। মাইয়ার অ্যামনে কোনো অসুবিদা নাই, তয় অনেক কষ্টে সংসার চলে। জামাই সহজ-সরল মানুষ। হোটেলে কাম করে। মানুষ মজুরিতে ঠকায়। দিনে ২০০ টাকা দ্যায়। তাই দিয়া কোনোরকমে দিন চলে।’

ছেলের জন্য মন কাঁদে সামিরনের। তিনি জানান, ভাতের জোগাড় করতে গিয়ে ছেলের দিকে নজর দিতে পারেননি। নেশায় আসক্ত হয়ে ছেলে নিরুদ্দেশ। কোথায় আছে, জানেন না তিনি।

ঈদের কোথাও যাননি? উত্তরে কিছুটা হেসে তিনি বলেন, ‘কই আর যামু, কেউ তো নাই। বৃদ্ধ মা আচে। নাটোরে ছোট ভাইয়ের সাথে থাকে। ওইখানে থাকার উপায় নাই। তাছাড়া ঈদের মধ্যে মেয়ে তো আমার কাছেই আসে। আমি আর কই যামু।’

এ বিভাগের আরো খবর