বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলা একাডেমির কার্ডে ‘ইদ’ কেন ‘ঈদ’

  •    
  • ৪ মে, ২০২২ ১৮:২৮

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা এবারের ঈদে যে শুভেচ্ছা কার্ড ছাপিয়েছেন সেখানে তিনি ‘ঈদ’ বানানটি ব্যবহার করেছেন। অথচ বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ বলছে ‘ঈদ’ বানানটি ‘অসংগত’। এই অভিধানেই বলা হয়েছে ‘ঈদ’-এর সংগততর বানান হলো ‘ইদ’।

ঈদ মোবারক।

সংযম শেষে সব

ভেদাভেদের উর্ধে

বিশ্বমানুষের মনে

সঞ্চারিত হোক

ভারসাম্যময়,

সদাচারময় ও

শান্তিময় ঐক্য।

মানুষ হোক শতভাগ

নান্দনিক ও মানবিক।

জয় সোনার বাংলা,

জয় সোনার পৃথিবী।

ঈদ মোবারক।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা গত সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে এভাবেই ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে এবারের ঈদে তিনি যে শুভেচ্ছা কার্ড ছাপিয়েছেন সেখানেও তিনি ‘ঈদ’ বানানটি ব্যবহার করেছেন। অথচ বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ বলছে ‘ঈদ’ বানানটি ‘অসংগত’। এই অভিধানেই বলা হয়েছে ‘ঈদ’-এর সংগততর বানান হলো ‘ইদ’।

নুরুল হুদার এই ‘ঈদকার্ড’ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই সমালোচনা করে বলছেন, বাংলা একাডেমির অভিধানের বানান নির্দেশনা মানছেন না খোদ প্রতিষ্ঠানেরই মহাপরিচালক।

কবি নুরুল হুদাও বলছেন, ঈদ প্রশ্নে জামিল চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’-এর অবস্থানের সঙ্গে তিনি একমত নন। নিজের একক সিদ্ধান্তেই তাই কার্ডে ‘ইদ’-এর পরিবর্তে ‘ঈদ’ ব্যবহার করেছেন তিনি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসেও ‘ঈদ’ লিখেছেন নুরুল হুদা

বিষয়টি সুরাহার জন্য শিগগিরই অভিধান সম্পাদনা পরিষদের সঙ্গে বসবেন বলেও জানাচ্ছেন নুরুল হুদা। তবে একাডেমি আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই মহাপরিচালক হিসেবে এমন কার্ড ছাপাতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের তিনি পরিষ্কার কোনো জবাব দেননি।

ফেসবুকে আলোচনার বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের বক্তব্য জানতে চেয়েছে নিউজবাংলা।

কার্ডটির সত্যতা নিশ্চিত করে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি নিজেও ফেসবুকে কার্ডটি পোস্ট করেছি। এ বিষয়ে আলোচনাও দেখছি। আমিও চাচ্ছিলাম এসব কথা হোক। যদি সবাই মিলে বলে যে ‘ঈ’ লিখব, তাহলে ঈদই লিখব। এ রকম আরও অনেক শব্দ আছে, কিন্তু ঈদ শব্দটা মোস্ট পপুলার শব্দের একটা তো।’

ঈদের দুটি বানানের পক্ষেও যুক্তি দেন তিনি। নুরুল হুদা বলেন, “আরেকটা কন্ট্রোভার্সিয়াল ব্যাপার আছে- ইংরেজিতে কিন্তু ‘ঈ’ উচ্চারণ নেই। আবার ইংরেজিতে আমরা ‘আই’ দিয়েও ঈদ লিখি না, ‘ই (E)’ দিয়ে লিখি। অনেকগুলো ব্যাপার আছে এখানে। আমি যেটা বলব, সেটা হলো ঈদ, ইদ দুটোই চালু রাখা যেতে পারে। আর অভিধানে ‘ঈদ’-এর পরে ‘অসংগত’ যেটা লেখা আছে, সেখানে শুধু লিখব প্রচলিত বানান।”

বাংলা একাডেমি ‘ই’ দিয়ে ইদ লিখলেও সেটা সর্বসাধারণের স্বীকৃতি পায়নি বলে স্বীকার করেন নুরুল হুদা।

তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এ পর্যন্ত যত বানানরীতি করেছে, কোনোটার জন্য কোনো বাইন্ডিংস (বাধ্যবাধকতা) দেয়নি। বাংলা বানানের ভেরিয়েশন প্রচুর। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে আরম্ভ করে রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু আমাদের পর্যন্ত বিভিন্ন শব্দের বানানে পরিবর্তন এসেছে। কিছু শব্দ আছে, এখনও যা আমাদের মধ্যে পপুলার। সেদিক থেকে বাংলা একাডেমি মনে করে, যে সমস্ত বানান বাংলা ভাষায় বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত হয়েছে, সেখান থেকে কোনো বানান কেউ ব্যবহার করলে তা ভুল বলার কোনো সুযোগ নাই।’

বাংলা বানানের ‘একেবারে লাস্ট ফর্মুলা’ এখনও তৈরি হয়নি বলেও মনে করছেন নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘আসলে ফাইনাল কখনও হয় না, চলতে চলতে ফাইনাল হয়। যেমন বাড়ি বানান এখন ‘ই’ হয়ে গেছে, বাঙালি ‘ই’ হয়েছে।’

‘ঈদ’ বানানকে বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘অসংগত’ বলাকে মোটেই পছন্দ করছেন না নুরুল হুদা।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, “আমি নিজেও দ্বিমত পোষণ করি অনেক বানানের বিষয়ে। কেন অসংগত হবে? অসংগত নয়। আমরা যখন বিদেশি সব শব্দে ‘ই’ ব্যবহারের নিয়ম করেছি, তখন থেকেই ঈদকে ইদ বলছি- এই তো? কিন্তু তাই বলে ‘ঈদ’ অসংগত নয়, বলতে হবে আগের বানান ছিল। আমি মনে করি, এভাবে লেখাটা ঠিক হয়নি।”

ঈদ বানানে বাংলা একাডেমিকে ‘ঈ’ দিতে প্ররোচিত করছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই’।

‘প্রচলিত যেসব বানান শুদ্ধ আছে, সেটা অশুদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেগুলো কেউ লিখলে ভুল নয়।’

এ বিষয়ে অভিধানের পরবর্তী সংস্করণে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে আমাদের কাজ কিন্তু চলছে। আরেকটা কথা বলি, বাংলা বানানের প্রমিতকরণ ছিল। তবে সেটা কিন্তু আমাদের বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা মানতে চাইতেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর