সাজেক, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, বান্দরবানের মতো পর্যটন এলাকাগুলোতে এখন যেকোনো ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়। আপনি যদি এ ভিড় এড়িয়ে দুটি দিন নির্জনে কাটাতে চান, তাহলে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে বিকল্প পর্যটনকেন্দ্র, সেখানে হয়তো সৈকত থাকবে না, পাহাড় থাকবে না, কিন্তু থাকবে প্রকৃতির শান্ত, সমাহিত রূপ, পাখির কলকাকলী আর সবুজের সমারোহ। আর থাকবে নাগরিক সব সুবিধা।
সৌভাগ্যক্রমে সারা দেশে এখন এ রকম পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠছে, যেগুলো আপনাকে কোলাহলমুক্ত নির্জনতা উপহার দেয়ার জন্যই তৈরি। এ রকম কিছু ব্যতিক্রমী নির্জন পর্যটনকেন্দ্রের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
-
হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন
রেমা ও কালেঙ্গা দুই ট্রেইলে নাম না-জানা অদ্ভুত বড় সব গাছ! বন পেরিয়ে মাঠ, আবার গহিন বনে গা ছমছম হাঁটা। বন্যপ্রাণীর এই অভয়ারণ্যে চাইলে গাছের শিকড়ে দোল খাওয়া যায়।
গাইড চোখের সামনে থেকে সরে গেলেই পথ হারিয়ে ফেলার অবস্থা। ভীষণ নির্জনে এই দুই অভয়ারণ্যে সাদা বকের দলসহ নানান জাতের পাখির দেখা মিলবে। আছে শকুনের অভয়ারণ্য।
রেমা ও কালেঙ্গা বনের অসম্ভব মায়াবী নির্জন গহিনে হাঁটার জন্য আছে ১ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা ও ৩ ঘণ্টার ট্রেইল। চাইলে তাঁবুতেও থাকা যায়। নিরাপদ এ বনের গহিনে শতবর্ষী গাছের শিকড়ে দোলও খেতে পারেন।
সফর পরিকল্পনা: যাতায়াতসহ দুই দিনেই এই ট্যুর করা সম্ভব। খরচ জনপ্রতি ৬ হাজার টাকার মধ্যে।
যাতায়াত: নন-এসি বাস (ওই রুটে এসি বাস নেই)
স্থানীয় পরিবহন: জিপ/অটোরিকশা
গাইড: বনের পথ চেনাতে দক্ষ গাইড।
-
সাতছড়ির গহিন নির্জনে
গহিন বনের নির্জনতায় হাঁটার আরও একটি বন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। রাজধানী থেকে ভোরে গিয়ে বিকেলেও ফেরা যায়।
সফর পরিকল্পনা: ভোর সাড়ে ৬টায় কল্যাণপুর বা রাসেল স্কোয়ার থেকে বাসে চাপতে হবে। বাস শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছাবে বেলা ১১টা নাগাদ। এরপর সিএনজি করে সাতছড়ি উদ্যান। সেখান থেকে গাইডসহ গহিন অরণ্যে।
খরচ: জনপ্রতি ২ হাজার টাকা।
পরিবহন: কল্যাণপুর থেকে বাসে শায়েস্তাগঞ্জ, সেখান থেকে সিএনজিতে সাতছড়ি।
-
নড়াইলের অরুণিমা রিসোর্ট
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে আর শীতের পাখি দেখতে মধুমতির তীরঘেঁষা অরুণিমা রিসোর্ট খুবই চমৎকার লোকেশন। বর্ষায় সময় কাটানোর জন্যও দারুণ। এখানকার গাছ আর লেকে বিকেলের পর থেকেই বসে পাখিদের মেলা।
মাওয়া ঘাট পেরিয়ে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ৪০ কিলোমিটার পরেই গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘুলিয়া। সেখান থেকে গ্রামের পথে আধা ঘণ্টা, এরপর খেয়া পার হয়ে আরও খানিকটা পথ পেরিয়েই অরুণিমা ইকো রিসোর্ট।
১০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই ইকো রিসোর্টে আছে সুইমিংপুল, গাছে ঘেরা বড় বড় পুকুর আর লেক।
নৌকায় চড়ে মাছ ধরা বা কাছ থেকে ঝাঁকের পাখি দেখা, ট্রি ক্লাইম্বিং আর ট্রেইল ধরে হাঁটার ব্যবস্থার পাশাপাশি আছে মাল্টা বাগানসহ নানা ধরনের ফল-ফুলের গাছ।
পরিবহন: সকাল ৭টা থেকে ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে টুঙ্গিপাড়া এ·প্রেস পরিবহন।
যাতায়াত: এসি বাস, হায়েস, অটোরিকশা, নৌকা।
-
দ্বিতল বাঁশবাড়ি
শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট
ভোরবেলা চোখ মেলেই দেখা যাবে কাঠবিড়ালি আর মাছরাঙা কিংবা নানা রঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি আর রাতে জিপসি তাঁবুতে ঘুমানোর সময় ঝিঁঝি পোকার ঘুমপাড়ানি ডাক। ভোরে ঘর থেকে পা ফেলতেই স্বাগত জানাবে শিউলি ফুল। দুই পা দূরেই ঘাট বাঁধানো পুকুরে শাপলা। পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মাঝে দোলনায় দোল খেতে খেতে নেয়া যায় প্রকৃতির স্বাদ। পেছনেই লাল পাহাড় ও লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট।
-
ব্যতিক্রমী দ্বিতল বাঁশবাড়ি
নদীপাড়ের গ্রামে বাঁশের দোতলা বাড়ি। পরিবার বা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেয়ার জন্য মনোরম জায়গা। ভোরে কল্যাণপুর থেকে বাসে বা ট্রেনে সিরাজগঞ্জ যাত্রা। সেখান থেকে নেমে অটোরিকশায় কাজিপুর। এরপর ভান্ডারবাড়ী গ্রাম। গ্রামে পৌঁছেই নদীর ছোট মাছ, টাটকা শাকসবজি আর ভর্তা ভাত খেয়ে যমুনা নদীতে নৌকা ভ্রমণ। সন্ধ্যায় বৈশাখীর চরে সূর্যাস্ত দেখে বাঁশের বাড়িতে ফেরা। রাতে উঠানের মাটির চুলায় হাঁসের মাংস আর চালের রুটির আয়োজন।