একজন মানুষের দৈনিক এক চা চামচ বা ৫ গ্রাম আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া দরকার, তবে দেশে অধিকাংশ মানুষ ১০ থেকে ১৫ গ্রামের বেশি লবণ খাচ্ছে।
বাড়ির বা বাইরের খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত এ লবণ। এতে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি।
প্রাণঘাতী এ রোগ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত লবণ না খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বন্ধ করতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে আসবে।
শনিবার সকালে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা উল্লিখিত অভিমত দেন। ওয়েবিনারের আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রজ্ঞার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি, তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকা ৫০ শতাংশ রোগীর বেশিরভাগই জানেন না, তাদের এই রোগ রয়েছে। এর কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়।
‘দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এই রোগ অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অতিরিক্ত লবণ জড়িত। তাই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। বাইরের খাবারে বেশিমাত্রায় লবণ থাকে। যেমন: চিপসে ১০ গ্রাম লবণ থাকে, তা অনেকই জানেন না।’
শিশুরাও উচ্চ রক্তচাপের রোগী
শামীম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আগে শুধু এই রোগটি বয়স্ক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হলেও সম্প্রতি শিশুদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি ১৫ বছরের একটি শিশু ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসেছে। তাই এখন থেকে এটি প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। তাই ১৮ বছর বয়স হলে প্রতিনিয়ত ব্লাড পেশার মাপবেন। ছয় মাস এক বছরের মধ্যে একবার মাপলে হবে না।’
বিনা মূল্যে মিলছে ওষুধ
শামীম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘দেশের ২১ ভাগ জনগোষ্ঠী উচ্চ শব্দ ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছে। তা অনেকেই জানে না, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৮০টি উপজেলায় বিনা মূল্যে এই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
‘আগামী বছরের মধ্যে ২০০ উপজেলায় এবং তার পরের বছরে ৪০০ উপজেলাকে বিনা মূল্যে ওষুধ সেবাদানের আওতায় আনা হবে। এমনকি প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় দেয়া হলেও আগামীতে গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করা হবে।’
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী শনাক্তে জোর
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘রোগী শনাক্তে প্রথমে স্ক্রিনিংয়ে জোর দিতে হবে। রোগী শনাক্তের পর ট্রিটমেন্ট দেয়া। আর যাদের নেই তাদের যাতে না হয়, সে হিসাবে কী কী লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে হবে, সে বিষয়ে আমরা বলল। প্রথম কাজ হচ্ছে সবাইকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা।’
তিনি বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (যেমন: খাদ্যের সাথে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার, তামাক ও অ্যালকোহল সেবন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে।’
আক্রান্ত বুঝবেন কীভাবে
বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগী জানেই না যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ জন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
অত্যধিক উচ্চ রক্তচাপ ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, বুকে ব্যথা এবং পেশি কম্পনের কারণ হতে পারে।
ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূইয়া, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।