বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রান্নার তেল বারবার ব্যবহারের ঝুঁকিমুক্ত কৌশল

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:৪৯

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মোক পয়েন্টে পৌঁছালে তেলের গুণাগুণ হারাতে শুরু করে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে তেল স্মোক পয়েন্টে পৌঁছানোর আগেই তাতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং ওই তেল একাধিবার ব্যবহার করা সম্ভব।

প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের তেল। পছন্দের ডিশে নিজের রুচি অনুযায়ী রাঁধুনিরা সয়াবিন, সরিষা কিংবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করে থাকেন।

ডুবো তেলে ভাজা পাকোড়া, পুরি কিংবা চিকেন ফ্রাইয়ের মতো খাবারে প্রচুর তেল প্রয়োজন হয়। ডুবো তেলে ভাজা মাছেরও কোনো জুড়ি নেই। তবে বেশি তেলে ভাজার আর্থিক চাপও রয়েছে। এ জন্য অনেকেই ভাজাভুজির পর বেঁচে যাওয়া তেল ফেলে না দিয়ে আবার নতুন রান্নায় ব্যবহার করেন।

তবে রান্নার তেলের এই পুনর্ব্যবহার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, একবার গরম করা তেল দ্বিতীয়বার রান্নায় ব্যবহার করলে প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এর সত্যতাই বা কতটা, সেটি যাচাই করেছে নিউজবাংলা।

আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং রন্ধন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তেল একবার গরম করলেই সেটি দ্বিতীয়বার রান্নার অনুপযোগী হয়ে পড়ে- এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং রান্নার পর বেঁচে যাওয়া তেল কিছু নিয়ম মেনে আবারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিভিন্ন তেলের রয়েছে বিভিন্ন ‘স্মোক পয়েন্ট’, অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় তেলের বাষ্পীভবন শুরু হয়। সরিষার তেলের স্মোক পয়েন্ট হলো ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আর মাস্টারক্লাস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সয়াবিনের স্মোক পয়েন্ট ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, পরিশোধিত সূর্যমুখীর তেলের ২২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, পরিশোধিত অলিভ অয়েলের ২৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং ঘির স্মোক পয়েন্ট হলো ২৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মোক পয়েন্টে পৌঁছালে তেলের গুণাগুণ হারাতে শুরু করে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে তেল স্মোক পয়েন্টে পৌঁছানোর আগেই তাতে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং ওই তেল একাধিবার ব্যবহার করা সম্ভব। যে তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি, সেটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি নিরাপদ বলেও মত দিচ্ছেন তারা।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে রান্নার তেল বারবার ব্যবহার করার বেশ কিছু নিয়ম জানিয়েছেন বিখ্যাত কয়েকজন শেফ।

ব্রিটিশ শেফ টম হান্টের পরামর্শ অনুযায়ী, তেলে ভাজাপোড়া রান্না করার অভিজ্ঞতা না থাকলে ওই তেল বারবার ব্যবহার না করাই ভালো।

হান্ট বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তেলটাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। একে পুড়িয়ে ফেলা বা বেশি গরম করে ফেলা যাবে না।’

দ্রুত গরম বা ঠান্ডা করে থাকলে তেলটা ফেলে দিতে হবে এবং নতুন তেল ব্যবহার হবে। কোনো কিছু ভাজার জন্য উচ্চতাপ দরকার হয়। যে কারণে উচ্চ স্মোকিং পয়েন্টসমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করা উচিত। হান্ট এ ক্ষেত্রে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘মানুষ যা ভাবে তার চেয়ে তেলের স্মোক পয়েন্ট কম। সাধারণভাবে এটি ১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এটা কমও হতে পারে। যে কারণে অতিরিক্ত গরম করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।’

হান্টের পরামর্শ তেল গরম করার সময় সাবধান থাকতে হবে। হান্টের কৌশল হলো, প্রথমবার ব্যবহারের পর তিনি তেলটাকে একদম ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দেন। এরপর সূক্ষ্ম ছাঁকনি ও চিজক্লথ (পাতলা কাপড়ের ছাঁকনি) দিয়ে ছেঁকে মুখবন্ধ কৌটায় আলো নেই এমন জায়গায় রেখে দিন।

আরেক জনপ্রিয় ব্রিটিশ শেফ রোমি গিল তার মায়ের শেখানো কৌশল অনুসরণ করে সূর্যমুখী তেল রেখে দিতেন কাচের বয়ামে। আরেক শেফ চেতনা মাকান তার ফ্রাইং প্যান ঢেকে রাখতেন এবং সেই তেল আবার ব্যবহারের আগে ছেঁকে নিতেন।

মাকান বলেন, ‘নিচে কিছু জমে থাকলে সেগুলো নতুন করে কিছু ভাজতে গেলে লেগে যাবে।’

হান্ট বলেন, ‘তেলের অবস্থার দিকে চোখ রাখুন। খুব বেশি কালো হয়ে গেলে বা আস্তর পড়ে গেলে বা ফেনা জমে গেলে সেটা ব্যবহার করা যাবে না। দুর্গন্ধ ছড়ানো তেল অবশ্যই এটা ফেলে দিতে হবে। দুর্গন্ধযুক্ত বা বিস্বাদ হয়ে গেলে দ্রুত এটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

তেলে যা কিছু ভাজা হয় তেল ওই স্বাদের হয়ে পড়ে। ফলে সতর্ক থাকা জরুরি। এ প্রসঙ্গে হান্ট বলেন, ‘মাছ বা মাংস বা গন্ধযুক্ত কোনো কিছু রান্না করলে সেটা পরের অন্য কিছু রান্নার সময় মাথায় রাখুন।’

গিল অবশ্য এক রান্নার তেল দিয়ে অন্য কোনো খাবার রান্না করার পক্ষপাতী নন। তিনি বলেন, মাছ রান্না করার তেল দিয়ে পরে অন্য কিছু রান্না করা ঠিক নয়।’

তবে হান্টের মতে, ‘আপনার মাছ রান্নার তেলে পর্ক ভাজতে পারেন। তবে ডোনাট অবশ্যই না।’

নষ্ট হওয়ার মাত্রা কমাতে কম তেল ব্যবহারের পরামর্শ এসব বিখ্যাত শেফের।

হান্ট বলেন, ‘যেসব খাবার ডুবো তেলে ভাজতে হয়, সেগুলো সাধারণত কম তেলে ভাজি। আমি সাধারণত এক সেন্টিমিটার তেল ব্যবহার করি। তাতেই ভালো করে নেড়েচেড়ে ও উল্টে নিই।’

অব্যবহৃত তেল বেসিন বা সিংকে ফেলা ঠিক নয়। এতে পাইপ আটকে যেতে পারে। মাকান বলেন, ‘আমি সব সময় খালি বোতলে তেলটা ঢেলে রাখি। পরে সেটা ভাগাড়ে ফেলে দিই।’

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তেল বারবার গরম করলে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ভারতের খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসআই) তেল গরম করতে নিরুৎসাহিত করে।

তাদের মতে, যদি পুনর্ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে তিনবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এর বেশি ব্যবহার করলে তেলে দেহের জন্য ক্ষতিকর ট্র্যান্স-ফ্যাট তৈরি হতে পারে।

এফএসএসআইয়ের গাইডলাইনে বলা আছে, ‘যতদূর সম্ভব তেলের পুনর্ব্যবহার ও গরম করে ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। ফেলে রাখা তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। যেসব ভেজেটেবল অয়েলে ২৫ শতাংশের বেশি টিপিসি (টোটাল পোলার কম্পাউন্ড) তৈরি হয়েছে, সেটা ব্যবহার করা ঠিক নয়।’

মিত্রাএসকে ফুড টেস্টিং সার্ভিসেসের ল্যাব ইনচার্জ ড. সৌম্যদীপ মুখার্জি বলেন, ‘তেল কতবার পুনর্ব্যবহার করা যাবে সেটা নির্ভর করছে কী জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, কী তেল ব্যবহার হচ্ছে এবং কোন তাপমাত্রায় একে কতক্ষণ গরম করা হয়েছে।’

‘স্মোক পয়েন্ট’ অতিক্রম করলে ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মোক পয়েন্ট অতিক্রম করলে তেলের উপরিভাগে ধোঁয়া দেখা যায়। ধোঁয়া মানে হচ্ছে তেল অত্যন্ত গরম হয়ে উঠেছে। এ সময় থেকে তেল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে।

এমনটা হলে সবচেয়ে বড় সমস্যা ফ্যাটি পলিমার উৎপন্ন হওয়া। এই পলিমারগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ব্যবহৃত তেল শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বাজে রং ও গন্ধের কারণে নষ্ট তেল খাবারকেও নষ্ট করে দিতে পারে।

আরও বিপদের কথা হচ্ছে, যা ভাজা হচ্ছে সেটায় চিনির পরিমাণ বেশি ও প্রোটিন কম থাকে। এ কারণে ভাজা খাবারের ক্ষেত্রে কম চিনি থাকা উচিত।

কীভাবে বুঝবেন তেল আর ব্যবহার করা যাবে না

রান্নার পাত্রের নিচে তলানি পড়তে দেখলে তেল বদলানোর কথা ভাবতে পারেন। তবে তেল নিয়মিত ফিল্টার করা হলে এই তলানি চোখে নাও পড়তে পারে। রান্না করার সময় তেলে বুদবুদ উঠতে থাকলে সেটা আর ব্যবহার করা ঠিক নয়।

ভাজাপোড়ার সঠিক উপায় কোনটি?

ভাজা তেল আবার ব্যবহার করা যাবে কি না, সেটা ঠিক করার জন্য তাপমাত্রা জানাটা জরুরি। প্রথম ব্যবহারেই স্মোক পয়েন্টের বেশি চলে গেলে যে ধরনের তেলই হোক, পরেরবার ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আরেকটি লক্ষণীয় বিষয়, কোন ধরনের খাবার ভাজা হচ্ছে। গরম তেলে খাবার ভাজার আগে একে শুষ্ক হতে হবে। যে কারণে তেলে ছাড়ার আগে ঘরের তাপমাত্রায় এগুলো বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিতে হয়। খাবারে থাকা পানি তেলকে নষ্ট হতে সাহায্য করে। আর রান্না শেষে সব সময় তেল ছেঁকে শুষ্ক কোনো বয়ামে বা জারে আলো পড়ে না এমন জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।

এ বিভাগের আরো খবর