শরীরের ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, অতি মাত্রার কোলেস্টেরল আর চিকিৎসকের বিধিনিষেধের ভয় পাশে ঠেলে আজ সুস্বাদু স্যান্ডউইচে আয়েশি কামড় বসানোর দিন।
এই দিনে বিশেষ করে আমেরিকানদের আটকে রাখার শক্তি কারও নেই, মধ্যাহ্নভোজে স্যান্ডউইচ লাগবেই। বহু বছর ধরেই ৩ নভেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে দেশটিতে উদযাপন হচ্ছে স্যান্ডউইচ দিবস।
অনেকের কাছে এটি ‘আনঅফিশিয়াল হলিডে’, কারণ বন্ধুবান্ধব বা পরিবার পরিজন নিয়ে নানা স্বাদের স্যান্ডউইচের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তারা। উৎসবের এ আনন্দ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে আটকে নেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও ভোজনরসিকরা পরখ করেন সুস্বাদু সব স্যান্ডউইচ। আর তাদের জন্যই এদিন খাবারের দোকানে থাকে বিশেষ প্রস্তুতি।
হাজার বছর আগের কথা। যুক্তরাজ্যে তখন রাজতন্ত্র। ইংল্যান্ডের কেন্টের একটি ছোট্ট শহর স্যান্ডউইচ। ওই সময় শহরের বাসিন্দারা বলতেন ‘সন্ডউক’। মুখে মুখে নাম বদলে হলো স্যান্ডউইক। আর ১০৮৬ সাল থেকে ‘স্যান্ডউইচ’ নামে ডাকা হয় শহরটিকে।
ইতিহাস বলছে, ছোট হলেও মানুষের কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় ছিল বাণিজ্যিক শহরটি। স্যান্ডউইচ অর্থ আসলে কী? ন্যাশনাল টুডে ডটকম বলছে, ‘মার্কেট টাউন অন স্যান্ডি সয়েল’ বা ‘বেলে মাটির শহর’।
শহরের নাম বদলে খাবারের নাম হওয়ার গল্পটাও বেশ মজার। রাজতন্ত্রের নিয়মে ওই শহরটির চতুর্থ ‘আর্ল’ ছিলেন জন মন্টাগো। ‘আর্ল’ হচ্ছে রাজ উপাধি। কোনো শহরে যুক্তরাজ্যের রাজার প্রতিনিধিকে ‘আর্ল’ বলা হয়। ওই শহরটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
জন ছিলেন তুখোড় কার্ড খেলোয়াড়। ৫২ কার্ডের হিসেবনিকেশেই ব্যতিব্যস্ত থাকতেন এই শহরপ্রধান। একদিন খেলতে বসে পেটে চেপে বসে ক্ষুধা। খেতে চান মাংস, কিন্তু কার্ড ছেড়ে ওঠার মানুষ তো জন নন। তাই শহরপ্রধান হুকুম দিলেন, তাকে এমন একটা খাবার দেয়া হোক যা খেতে খেতে কার্ড খেলা চলতে পারে। যেন একহাতে কাঁটাচামচ ছাড়াই আয়েশ করে খেতে পারেন।
স্যান্ডউইচ শহরের চতুর্থ ‘আর্ল’ জন মন্টাগো
বাবুর্চি ভেবেচিন্তে দুই স্লাইস পাউরুটির মাঝে মাংস পুরে খেতে দিলেন আর্লকে। খেলার মধ্যে ডুবে থেকে তিনি আয়েশে খেয়ে নিলেন সেই খাবার।
আর এই গল্প লোকমুখে ছড়িয়ে গেলে, শহরের সাধারণ মানুষও দোকানে গিয়ে জানালেন ‘স্যান্ডউইচের মতো’ খাবারের আবদার। এরপর থেকে ধীরে ধীরে খাবারটির নাম হয়ে গেল ‘স্যান্ডউইচ’। এভাবেই স্যান্ডউইচ শহরের আর্ল জন মন্টাগোর আলস্য থেকে উদ্ভব হলো পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের।
অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, খাদ্য হিসেবে ‘স্যান্ডউইচ’ শব্দটি লিখিত আকারে এসেছে ১৮ শতকের দিকে। ওই সময় এডওয়ার্ড গিবন নামের এক ইংরেজ সংসদ সদস্য তার জার্নালে শব্দটি ব্যবহার করেন। যদিও ইতিহাসবিদদের দাবি, মানুষ যখন রুটি খেতে শিখেছে, তখন থেকেই ‘স্যান্ডউইচ’ নামে না হলেও খাবারটি ছিল।
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন স্যান্ডউইচ নামের খাবারটির উদ্ভব হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে। দুই স্লাইস রুটির মাঝে ভেড়ার মাংস, হার্ব, বাদাম পুরে খেয়েছিলেন রাব্বি হিলেল নামের এক ইহুদি। তবে আজকের দিনে খাবারটিকে আর ‘হিলেল’ বলা হয় না, বরং পরিচিতি পেয়েছে ‘স্যান্ডউইচ’ নামেই।
জন মন্টাগোর জন্ম ১৩ নভেম্বর হলেও স্যান্ডউইচ ডে পালন করা হয় ৩ নভেম্বর।
ভোজনরসিকরা দিনটি উদযাপনের কৌশলও বাতলে দিয়েছেন। তাদের মতে সকালটা শুরু করা উচিত বেকন আর ডিম দিয়ে বানানো স্যান্ডউইচ খেয়ে। আর মধ্যাহ্নভোজে খেতে হবে এগ স্যালাড স্যান্ডউইচ। রোস্ট বিফ স্যান্ডউইচ গিলতে হবে নৈশভোজে। এখানেই শেষ নয়, আইসক্রিম স্যান্ডউইচের স্বাদ নিতে হবে ডেজার্ট হিসেবে।