বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীৎকারের ভালো-মন্দ

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ১৯:১১

১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে ২০১১ সালে করা এক গবেষণায় দেখে গেছে, ৬৬ ভাগ নারী সঙ্গীর চরম মুহূর্ত দ্রুততর করতে শীৎকারের আশ্রয় নিয়েছেন। আর ৮৭ ভাগ এমনটি করেছেন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে।

কেন শীৎকার- এমন প্রশ্নের উত্তর সাধারণভাবে সহজ মনে হলেও, এর গভীরে যাওয়া প্রায় সবার জন্য অস্বস্তিকর এবং বেশ জটিল।

এটি কি সঙ্গিনীকে তীব্র আবেগের মুহূর্ত উপহার দেয়ার প্রকাশ্য স্বীকৃতি? অথবা যৌনতা নির্ভর সিনেমা বা পর্নোগ্রাফিতে যেমনটি দেখা যায়- তেমন উত্তেজনাপূর্ণ শারীরিক মিলনের ফলে এটি কি অর্গাজমের প্রকাশ? এটি কি আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, নাকি শীৎকারে চাপা পড়ে পরিপূর্ণ আনন্দের অনেক উপলক্ষ্য?

এমন অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া বেশ কঠিন। অনেকে আবার এমনটাও দাবি করেন, শীৎকারের পেছনে নারীর সহজাত উত্তেজনার পরিবর্তে পুরুষকে তুষ্ট করার প্রবণতাই বেশি দায়ী। সুইসাইড স্কোয়াড খ্যাত ব্রিটিশ অভিনত্রী কারা ডেলেভিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, অর্গাজমের সময় চুপচাপ থাকাই বরং আনন্দের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

এলেনটিউবের সিরিজ লেডি পার্টসের উপস্থাপক সারাহ হাইল্যান্ডকে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘যখন আপনি ঘনিষ্ঠতাকে আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং কোনো শব্দ করেন না, তখন অনুভূতির মাত্রা অনেক তীব্র হয়।’

অর্গাজমের সময় শব্দ করতে হবে এমন ধারণা এক সময়ে নিজের মধ্যেও ছিল উল্লেখ করে ডেলেভিন বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমি শব্দ করা বন্ধ করে দেই এবং সেটি আসলেই ছিল দারুণ উপভোগ্য।’

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক সাইট ভাইস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনতার প্রচলিত ধারণায় নারীর কামোত্তেজক উচ্চস্বরকে প্রায় সব সমাজেই গুরুত্ব দেয়া হয়। ধরে নেয়া হয়, এটি ভালো অর্গাজমের বৈশিষ্ট্য। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর শীৎকার তাদের সঙ্গীর আত্মবিশ্বাসকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং পরবর্তী সময়ে আবারও কাছাকাছি আসতে তাদের উৎসাহিত করে। আর এ জন্য আসল বা নকল দুই ধরনের অর্গাজমের ক্ষেত্রেই অনেক নারী সচেতন বা অবচেতনভাবে শীৎকারে অংশ নেন।

১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী নারীদের নিয়ে ২০১১ সালে করা এক গবেষণায় দেখে গেছে, ৬৬ ভাগ নারী সঙ্গীর চরম মুহূর্ত দ্রুততর করতে শীৎকারের আশ্রয় নিয়েছেন। আর ৮৭ ভাগ এমনটি করেছেন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে।

একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ৩৬ বছর বয়সী বিদিশা দাস ভাইসকে বলেন, ‘আমি বিয়ের পর শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। খুব অল্প যে কয়েক বার আমরা মিলিত হতাম, আমি শীৎকারের ভান করতাম যেন সে (স্বামী) দ্রুত স্খলন ঘটাতে পারে। সবকিছু দ্রুত শেষ করে দিতে চাইতাম আমি।’

কিছু জায়গায় আবার যৌনমিলনের সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করা বেশ কঠিন। ভারতের নয়াদিল্লীর যৌন সম্পর্ক প্রশিক্ষক পল্লভি বার্নওয়াল ভাইসকে তার এক ক্লায়েন্টের গল্প বলেন। রেললাইনের পাশে ছোট একটি বাসায় থাকত ওই দম্পতি। একান্নবর্তী পরিবারে তাদের শোয়ার জায়গাটি একটি আধাস্বচ্ছ পর্দা দিয়ে আলাদা করা ছিল।

পল্লভি বলেন, ‘তারা চাইত শীৎকার করতে, কিন্তু সম্ভব ছিল না। একপর্যায়ে তারা একটি উপায় খুঁজে বের করে, নিজেদের অর্গাজমের সময় তারা ট্রেন যাওয়ার সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। ওই এক মিনিটেই যা করার তারা করে নিত।’

পল্লভি মনে করেন, শব্দহীন যৌনতার কিছু সুবিধাও আছে। তার মতে, কয়েকটি ক্ষেত্রে এটি আপনার সঙ্গীর দেহ ও অনুভূতির নতুন কিছু দিক উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘চোখ বন্ধ করে যখন আপনি নীরবে আপনার সঙ্গীর আঙ্গুলের ছোঁয়া অনুভব করেন তখন ওই মুহূর্তটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। যৌনতা মানেই যে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত তা কিন্তু নয়, অনেক সময় এটি শুধু সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ও হতে পারে। একে অপরের দেহে ডুবে থেকে একেবারে সত্য কোনো কথোপকথনের উপলক্ষ্যও হতে পারে। আমরা অসংখ্য উত্তেজক স্থান খুঁজে বের করতে পারি, যা সাধারণত দ্রুত ও শীৎকারপূর্ণ যৌনতার সময় আমাদের মনোযোগের আড়ালে চলে যায়। নীরবতা একে অপরের শরীরকে খুঁজে নেয়ার ও অনুভব করার স্বাধীনতা দিতে পারে।’

তবে কিছু সংস্কৃতিতে শীৎকারের ভান করা এক ধরনের বিশুদ্ধতা এবং খাঁটি নৈতিকতার ধারণার সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে জড়িত। নিজের বিয়ের প্রথম রাতে ‘শুদ্ধ’ প্রমাণের জন্য পল্লভিকে তাই যন্ত্রণাকাতর শব্দের ভান করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশে নারীর কুমারিত্ব বহু বছর ধরে বিশুদ্ধতা ও সচ্চরিত্রের পরিচায়ক।’

২২ বছরের ছাত্রী প্রজ্ঞা সিংয়ের মতে, শীৎকারের প্রত্যাশা অধিকাংশ সময়ই পুরুষের কাছ থেকে আসে, যদিও তারা এটা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন না। তিনি শব্দহীন যৌনতা পছন্দ করেন, কিন্তু এর ফলে সঙ্গী দ্বিধাগ্রস্ত হোক- এটাও চান না।

প্রজ্ঞা বলেন, ‘আমার সঙ্গী শব্দ পছন্দ করে। এটা আমাদের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম। আমি শব্দহীন যৌনমিলনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু এতে তারা উত্তেজিত হননি। তারা শব্দ ও আমি নোংরা কিছু বলছি, এমন বিষয়টিকে পছন্দ করে। শব্দের অনুপস্থিতি তাদের কাছে পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারা চিন্তায় থাকে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি কিনা।’

তবে পরিস্থিতি পুরুষের নিয়ন্ত্রণে বাইরে থাকলে তারা আবার নারীদের নিশ্চুপ রাখতেই তৎপর হয়।

প্রজ্ঞা বলেন, ‘পাশের রুমে অন্য কেউ থাকলে তারা আপনাকে চুপ করানোর চেষ্টা করবে। ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারীর শব্দ করা বা না করা পুরুষের উত্তেজিত হওয়ার একটি উপলক্ষ্য। কখন আপনি শব্দ করছেন আর কখন করছেন না, সেটি নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় পুরুষই থাকতে চায়।’

যৌনতার প্রশিক্ষক কারিশমা স্বরূপের মতে যেসব দেশে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ সেখানে নীরব সেক্সের আরেকটা কারণ আছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংস্কৃতিতে বাস করি যেখানে আসলে সেক্স নিয়ে কথা বলা যায় না। আর নারীর উচ্চস্বরে কথা বলা বা উদ্ধত হওয়াটিকে অস্বস্তিকর হিসেবে দেখা হয়। যে কারণে শীৎকারকে নারীর আবেগের জায়গা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেও দেখা হয়।’

প্রচলিত ধারণা বা পর্নো সিনেমা দেখার কারণে শীৎকারকে ‘সঠিক’ হিসেবে অনেকে ধরে নিলেও স্বরূপের মতে, যৌনতায় কোনো নির্দিষ্ট একটি ধরনকে ‘উত্তম’ বলা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, ‘যৌনতা নিয়ে আমাদের সবারই একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দিনশেষে কার সঙ্গে আপনি শীৎকার করছেন বা করছেন না সেটাই বিবেচ্য। দারুণ একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কেমন অনুভব করছেন সেটি শব্দ করে জানান দেয়া একটি ভালো উপায়। তবে নির্যাতনমূলক শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেখানে আবেগ একমুখী, সেখানে শব্দ করা বা না করায় বিশেষ কিছু আসে-যায় না, নির্যাতনই সেখানে শেষ কথা, যৌনতা নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর