যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে অন্তত ১৩ জন আহত হন। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে তাতে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৫২৭ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরজুড়েও তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাব জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় গত রাতে অভিযান চালিয়ে ৪০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকা কমপক্ষে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি ‘নিখোঁজ’ বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, তাদের পরিবারগুলো সংগ্রাম করছে। যুদ্ধের সময় থেকেই তারা তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি চেয়ে আসছে। মানুষ বেলচা, ন্যূনতম সরঞ্জাম, এমনকি খালি হাতেও প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে পুনর্গঠন কাজ স্থবির হয়ে আছে, আর গোটা গাজাজুড়ে হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি বোমা এখন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে।
গাজা সিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না পারায় ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ও নতুন কূপ খনন করতে গাজা সিটিতে কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার টন সিমেন্টের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। মেয়র বলেন, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন হাজারও মানুষ এবং মানবিক সহায়তা ও ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না দেওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
আল জাজিরার গাজার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। এত বড় চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় ঢুকতে পেরেছে। খুদারি জানান, নতুন যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারে, ফিলিস্তিনিদের নয়।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা জানেন, যতক্ষণ না সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে কোনো অগ্রগতি হবে না।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ শহরে এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার অভিযানে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডকে সহায়তা করতে রেড ক্রসের গাড়ি পৌঁছেছে।
গাজার পুনর্গঠনকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলো। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট বলেন, ‘গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশেই বোমা পড়েছে,’ এবং বহু গোলাবারুদ আঘাতের পরই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তিনি বলেন, এই বোমা অপসারণে সময় লাগছে, ফলে পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে। টরবেটের মতে, সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো, ‘ছোট পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাটিকেই উড়িয়ে দেওয়া।’
এদিকে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু ইসরায়েলেরই আছে এবং তিনি দাবি করেন যে, এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রও মেনে নিয়েছে।