বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:৩৯

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রায় দুই বছর পর ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভোটার এই সংঘাত মোকাবিলায় ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।

গাজায় হামলার প্রতি এই অসন্তোষের কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভোটাররা এই অঞ্চলের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতের বিষয়ে তাদের সহানুভূতি পুনর্মূল্যায়ন করছেন। টাইমস ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করার পর এই প্রথম ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুটা বেশি ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেসময় ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলকে এবং ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

নতুন জরিপে ৩৪ শতাংশ ইসরায়েলিদের পক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তারা সংশয়ে আছেন অথবা দুই পক্ষকেই সমানভাবে সমর্থন করেন।

অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এখন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর জনমতে এটি একধরনের বড় পরিবর্তন। প্রতি ১০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬ জন বলেছেন, বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাক বা না পাক বা হামাস নির্মূল হোক বা না হোক, তবু ইসরায়েলের উচিত সামরিক অভিযান বন্ধ করা।

৪০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালাচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সব মিলিয়ে টাইমস/ সিয়েনা জরিপের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে বড় ধরনের অবনতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে দুই দলই সমানভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছিল। এই অতি বিভক্ত যুগে জনমতে এত বড় পরিবর্তন অস্বাভাবিক ঘটনা বটে। সাধারণত যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।

আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকফুট শহরের ডেমোক্র্যাট সমর্থক অস্টিন মাগলস্টন বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

যোগাযোগ খাতে কাজ করা ৩৩ বছর বয়সী মাগলস্টন বলেন, ‘আমি আসলে কয়েক বছর ধরে বেশ ইসরায়েলপন্থী ছিলাম, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের সেই বিধ্বংসী হামলার রাতের কথা শোনার পর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাউকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটি যত দীর্ঘ হচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা করছে, তা দেখে এটিকে আর কোনোভাবেই সমান ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে না।’

এই জরিপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যের বৃহত্তম প্রাপক, যারা এ পর্যন্ত শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।

দল-মতনির্বিশেষে তরুণ ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে কম আগ্রহী। ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭ জন অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বা সামরিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন।

ইসরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। রিপাবলিকানরা মূলত ইসরায়েলকে সমর্থন করে চলেছে। তবে তাদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সামান্য কমেছে।

প্রায় দুই বছর আগে ডেমোক্র্যাটরা সমানভাবে বিভক্ত ছিল। তখন ৩৪ শতাংশ ইসরায়েল এবং ৩১ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এখন সারাদেশের সাধারণ ডেমোক্র্যাটরা বিপুলভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। ৫৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল, যেখানে মাত্র ১৩ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

প্রতি ১০ জন ডেমোক্র্যাটের মধ্যে ৮ জনের বেশি বলেছেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও ইসরায়েলের উচিত গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল প্রতি ১০ জনে ৬ জন। এখন এটিকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বলা যায়।

কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের হার্টফোর্ডের শহরতলির ৩৯ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট সমর্থক শ্যানন ক্যারি বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সরকারের পদক্ষেপ ‘অযৌক্তিক’ হয়ে উঠেছে। তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করুক।

পেশায় স্বাস্থ্য সহকারী মিসেস ক্যারি বলেন, একজন মা হিসেবে ওই শিশুদের দেখাটা ভয়ংকর। এটা কোনো যুদ্ধ নয়। এটা জাতিগত নিধন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি এসেছে একটি অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে—শ্বেতাঙ্গ, কলেজ-শিক্ষিত, বয়স্ক ডেমোক্র্যাট। এসব ব্যক্তিই সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় দলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছেন। তরুণ ডেমোক্র্যাট ও কলেজ ডিগ্রিবিহীন ডেমোক্র্যাটরা প্রায় দুই বছর আগে সংঘাত শুরুর সময় থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

২০২৩ সালে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ডেমোক্র্যাট ভোটারদের প্রতি ২ জন ইসরায়েলকে সমর্থন করতেন আর একজন ফিলিস্তিনকে। সেই চিত্র উল্টে গেছে। এখন ৪২ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি এবং ১৭ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল।

মধ্য ফ্লোরিডার ৬৭ বছর বয়সী প্যাটি ওয়েস্ট বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে মার্কিন সম্পৃক্ততার একজন শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন। তিনি সহায়তা বন্ধ করার ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। অবশেষে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, এটি সংঘাত অবসানে সাহায্য করছে না।

ডেমোক্র্যাট সমর্থক ওয়েস্ট বলেন, ‘আমরা কেন এতে অর্থায়ন করে চলেছি? এটা আমার ছোটবেলা থেকে চলছে এবং এখনো চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা একে অপরকে সারাজীবন ঘৃণা করে যাবে।’

শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমে যাওয়াটা অ-শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের পরিবর্তনের চেয়েও বেশি স্পষ্ট। সংঘাত শুরুর সময় অ-শ্বেতাঙ্গ ডেমোক্র্যাটরা এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মেয়াদকালে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এমনকি তিনি ইসরায়েল সরকারের প্রতি কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল।

বিপরীতে, রিপাবলিকান ভোটাররা মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। একাধিক পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে এগোলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে খুব কমই পার্থক্য রেখেছেন।

প্রতি ১০ জন রিপাবলিকানের মধ্যে ৭ জন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অধিকাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া উচিত। এমনকি এর জন্য বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হলেও। ৪৭ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেসামরিক মৃত্যুরোধে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছে।

মিনিয়াপোলিসের ৫১ বছর বয়সী রক্ষণশীল ভোটার এডওয়ার্ড জনসন বলেন, ইসরায়েলিরা নিজেদের রক্ষা করতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট সক্ষম। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন কেউ তাদের ওপর চড়াও না হয়।

তবে রিপাবলিকানদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কমেছে। অবশ্য তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

রিপাবলিকানরা এখনো ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। ৬৪ শতাংশের বিপরীতে ৯ শতাংশ। কিন্তু ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে। ওই সময় ৭৬ শতাংশ ইসরায়েলের পক্ষে ছিলেন।

প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকান বলেছেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বেসামরিক মৃত্যুরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সেন্ট লুইসের ২৯ বছর বয়সী ট্রাম্প সমর্থক মেসন নর্থরুপ বলেন, তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করেন। তবে তিনি চান প্রেসিডেন্ট যেন এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কমান।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কে নর্থরুপ বলেন, ‘তার একটু পিছিয়ে আসা দরকার। কারণ, ইসরায়েলিরা বেশ কঠিন কাজ করতে সক্ষম। আমাদের উচিত তাদের নিজেদের যুদ্ধ লড়তে দেওয়া।’

২০২৫ সালের ২২ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১ হাজার ৩১৩ জন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে পরিচালিত এই জরিপ চালানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর