বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পশ্চিমবঙ্গের বেহালায় পূজামণ্ডপে স্বাধীন ফিলিস্তিনের ডাক

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:৩৮

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেহালায় একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপে এ বছর শিল্পীরা এক অন্য রকম প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিয়েছেন। কেবল শিল্পসৌন্দর্য নয়, বরং যুদ্ধবিরোধী আর্তি এবং ক্ষুধার্ত মানুষের বেঁচে থাকার কাহিনি ফুটে উঠেছে এ মণ্ডপে। বেহালা ফ্রেন্ডস ক্লাবের আয়োজনে এ দুর্গোৎসবের প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে গাজায় চলমান বিধ্বংসী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দুর্ভিক্ষ। সর্বজনীন এই পূজামণ্ডপে শিল্পের ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই মানবিক সংকটকে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সাজানো হয়েছে মণ্ডপের প্রতিটি কোণ।

পূজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজার এই মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের সঙ্গে বাংলার ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতি যেমন লক্ষাধিক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল, আজ একইভাবে ইসরায়েল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয়ে খাদ্যরসদ আটকিয়ে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এই পূজামণ্ডপের নকশাকারী শিল্পী রাজনারায়ণ সন্ত্রা বলেন, ‘যেমন এক সময়ে চিত্তপ্রসাদ ও জয়নুল আবেদিন ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি এঁকে প্রতিবাদ করেছিলেন, তেমনি আমরাও আজ তুলি ও প্রতিমা দিয়ে প্রতিবাদ করছি।’

মণ্ডপের প্রবেশ পথে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে গাজাবাসী ফিলিস্তিনি কবি নামা হাসানের আরবি ভাষার কবিতা ‘ফেস টি ফেস’। যেখানে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ রয়েছে। হাসানের লেখা সেই কবিতা বাংলায় লেখা রয়েছে প্যান্ডেলের দেয়ালে। ‘জেনোসাইড’ লেখা একটি চিত্রপটের পাশেই স্থান পেয়েছে এই কবিতাটি।

এর ঠিক বিপরীত দেয়ালে লেখা ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’। এই গণহত্যা ও মুক্তির দাবির মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি ভেন্ডিং মেশিন, যেখান থেকে কোমল পানীয়ের বদলে বের হচ্ছে অস্ত্র।

পুরো প্যান্ডেলজুড়ে ফিলিস্তিনি নাট্যকার রিদা গাজালেহর কণ্ঠে দুর্ভিক্ষপীড়িত ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক বাস্তবতার কথা বাজানো হচ্ছে।

প্রবেশপথ তৈরি হয়েছে মানুষের পাঁজরের কাঠামো দিয়ে, যা দুর্ভিক্ষে মানুষের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা বোঝাতে প্রতীকী রূপ পেয়েছে।

ভেতরে ছাদের ওপর থেকে ঝুলছে চালভর্তি বস্তা চেপে ধরা বিশাল বল-প্রেস যন্ত্র, যেন খাদ্য মজুদের ভয়ংকর নিদর্শন।

এ ছাড়া পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গা ও তার সন্তানদের রূপে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সমস্ত জাঁকজমক ও জৌলুস মুছে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাধারণ ও রুক্ষ রূপ।

শিল্পী প্রদীপ দাস বলেন, ‘আমরা জানি ঝুঁকি নিয়েছি। সরকারের অবস্থান এক রকম হলেও শিল্পীরা যদি চুপ করে থাকেন, তবে তদের শিল্পী বলা যায় না।’

রাজনারায়ণ সন্ত্রা বলেন, ‘শিল্পীদের প্রতিবাদ সীমান্তের মধ্যে আটকে থাকতে পারে না। ২০২১-এ যেমন রিহানা বা গ্রেটা থুনবার্গ ভারতের কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ আমরা গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ালাম।’

দর্শনার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন, সাধারণত পূজামণ্ডপে এত গভীর রাজনৈতিক ও মানবিক বক্তব্য আগে দেখেননি। শিল্পীরা শুধু দেবী দর্শনের আঙ্গিকে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং যুদ্ধবিরোধী আর্তিকে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আয়োজনে মিশিয়ে দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর