ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠকের আগে গাজা যুদ্ধের অবসানে একটি চুক্তির দাবিতে তেল আবিবে হাজারো ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছে।
গত শনিবার এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। গাজার
বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে সমবেত হয়ে একটি বড় ব্যানার প্রদর্শন করে। ব্যানারটিতে লিখা ছিল, সব বন্দিকে এখনই ঘরে ফিরিয়ে আনো।
গাজায় বন্দি থাকা ওমরি মিরানের স্ত্রী লিশাই মিরান-লাভি বলেন, ‘এই যুদ্ধ বন্ধ করার এবং সব বন্দি ও সৈনিকদেরকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত চুক্তিই কেবল এই ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।’
তিনি ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ওপর আপনার প্রভাব খাটান। এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, ওমরি ও অন্যান্য বন্দিদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।’
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। যদিও ট্রাম্প গাজা নিয়ে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি গাজা চুক্তি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটি একটি চুক্তি, যা বন্দিদের ফিরিয়ে আনবে ও যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।’
গাজায় একদিনে আরও ৯১ জনকে হত্যা করল ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ৯১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৮ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। যার মধ্যে ছয়জন ত্রাণ নেওয়ার সময় নিহত হন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
দখলদার ইসরায়েল মধ্য গাজার সারায়া এলাকায় বেসামরিক মানুষের ওপর বোমাবর্ষণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হলেও থামছে না আগ্রাসন।
এরইমধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ হুমকি দিয়েছেন, সব লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজায় তারা যুদ্ধ থামাবেন না। এছাড়া তিনি গাজায় বর্বরতা বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার যুদ্ধ বন্ধে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ৮ মুসলিম দেশের নেতারা। ওই সময় ট্রাম্প তাদের কাছে ২১ দফার প্রস্তাব পেশ করেন। বৈঠক শেষে একাধিক মুসলিম নেতা জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের ভালো আলোচনা হয়েছে।
সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হবে। ওই সময় জানা যাবে, এ চুক্তিটি ইসরাইল মানবে কি না।
নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভাষণে জানান, গাজায় তারা হামলা অব্যাহত রাখবেন। অপরদিকে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তারা হয়ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছেন।
‘গাজায় ইসরায়েলি হামলার সামরিক যুক্তি নেই’
গাজায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। শুক্রবার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া স্থানের ওপর আঘাত চালিয়ে যাওয়ার কোনও সামরিক যুক্তি নেই। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরেছেন ওবামা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
ওবামা বলেন, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যারা সরাসরি সহিংসতার অংশ নই, তাদের এখনই স্বীকার করা উচিত যে, শিশুদের ক্ষুধার্ত হতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার ভিতরে যে মানবিক সংকট চলছে তা উপেক্ষা করা অগ্রহণযোগ্য। আমাদের অবশ্যই জোর দিয়ে বলা উচিত যে, উভয় পক্ষকে এমন একটি সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে একটি নিরাপদ ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং স্বায়ত্তশাসন বিদ্যমান থাকবে।’
গাজা যুদ্ধ নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরল মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন এবং বিশ্ব নেতাদের ওপর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন।
রাজনৈতিক নেতাদেরও সমালোচনা করেছেন ওবামা। বিশেষ করে নেতানিয়াহুসহ যারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জটিল সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, আমরা সব সময় সব বিষয়ে একমত ছিলাম না। দুঃখজনকভাবে, অনেক সময় নেতৃত্ব এবং রাজনীতিবিদরা এমন একটি স্বার্থপর সম্পর্ক বজায় রাখেন এটা শুধু ‘আমরা বনাম তারা’। কারণ, এতে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ হয়। এটা একটি প্রলোভনমূলক খেলা। আমি আমার প্রেসিডেন্সির সময় দেখেছি, আমি সবসময় ওই অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিলাম না। কারণ আমি তাদের এই ব্যাপারে কথা বলতাম।
জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলে সমস্যার সমাধান করার হামাসের নিষ্ঠুর পদ্ধতিরও সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, গাজা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধ করা আবশ্যক।
ওবামা জোর দিয়ে বলেন, গাজা উপত্যকার মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর ‘অনুমতি দিতে হবে’।
ইসরায়েল এই মাসের প্রথম থেকে গাজা শহরে স্থল অভিযান শুরু করেছে। হামাসের শেষ অবশিষ্ট ঘাঁটি লক্ষ্য করার কথা বললেও, তাদের উদ্দেশ্য শহরটি দখল এবং অধিগ্রহণ করা।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজা শহরে ইসরায়েলের আক্রমণের পরিকল্পনা প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির ঝুঁকিতে ফেলবে। ট্রাম্প প্রশাসনও সংঘাত সমাপ্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন।