পৃথিবীতে এসেছে প্রথম সন্তান, কিন্তু সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাই বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে নবজাতকের উদ্দেশ্যে একটি হৃদয়বিদারক চিঠি লিখেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে মাহমুদের চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
পুত্র দীনকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদ লিখেছেন, ‘আমি যখন ভাবি, তোমাকে প্রথমবার কোলে নিতে পারিনি, তোমার প্রথম কান্না শুনতে পারিনি, তোমার মুঠোবাঁধা হাত খুলে দিতে পারিনি, কিংবা তোমার প্রথম ডায়াপার বদলাতে পারিনি; আমার হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে।’
নিজের সন্তানের জন্মের সময় তার অনুপস্থিতিকে তিনি ফিলিস্তিনের বহু পিতার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাহমুদ।
বেদনা জড়িত বাক্যে তিনি লেখেন, ‘বর্ণবাদী শাসন ও দূরবর্তী কারাগারে বন্দি হয়ে আমিও অন্যান্য ফিলিস্তিনি পিতাদের মতো তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি।’‘প্রতিদিন জন্ম নেওয়া যেসব শিশুর পাশে তাদের বাবারা থাকেন না— তারা স্বেচ্ছায় যান না কোথাও। যুদ্ধ, বোমা, কারাগার কিংবা দখলদারত্বের নির্মম যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তোমার মা ও আমি যে শোক অনুভব করছি, তা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর বহু প্রজন্ম ধরে ডুবে থাকা দুঃখের সাগরের একটি ক্ষুদ্র ফোঁটা মাত্র’, বলেন মাহমুদ।
নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বর্ণনা করে মাহমুদ চিঠিতে আরও লেখেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি অটল সমর্থনের কারণেই তিনি আজ বন্দি।
সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘একদিন হয়তো তুমি জানতে চাইবে কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মানুষকে শাস্তি পেতে হয়, কেন সত্য ও সহানুভূতি ক্ষমতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’‘এই প্রশ্নগুলো কঠিন, কিন্তু আমি আশা করি আমাদের গল্প তোমাকে এটা শেখাবে; এই পৃথিবীর প্রয়োজন আরও সাহস। এমন মানুষ প্রয়োজন যারা সুবিধা নয় বরং ন্যায়কে বেছে নেন।’
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এ বছরের ৮ মার্চ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিলের কথা জানায় ওয়াশিংটন।