ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পরবর্তী সামরিক সংঘর্ষ হবে চূড়ান্ত। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটিকে এমন তথ্য জানিয়েছে ইরানের একটি সূত্র। সূত্রটি জানিয়েছে, ইরান এখন ইসরায়েলের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন এবং দেশটির কাছে এখনো বহু উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি শত শত মানুষ এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন, যারা পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হয়।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল নাতানজ ও ফরদোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। তেহরান বরাবরই সামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। দেশটি পাল্টা জবাব দেয় কামিকাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। ইরান সরাসরি ইসরায়েল এবং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে।
১২ দিনব্যাপী এ সংঘাত শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে, যা এখন পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) আরটিকে দেওয়া এক মন্তব্যে তেহরানের এক সূত্র জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে পরবর্তী যুদ্ধকে চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসেবে দেখছে। তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় ইরান ইসরায়েলি শাসনের দুর্বলতা শনাক্ত করতে পেরেছে।
সূত্রটি দাবি করে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কাছে এখনো নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, এবং যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিদিন অন্তত কয়েক শত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হবে।
সূত্রটি জানায়, দেশের জনগণ এবং প্রবাসী ইরানিদের কাছ থেকে সরকার অভূতপূর্ব সামাজিক সমর্থন পাচ্ছে। যদিও ইরান জানে যেকোনো সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে, তবুও তেহরান এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, তেহরানের সামরিক জবাবে ইসরায়েলি রাষ্ট্র কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত ও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ না হলে জায়নিস্ট শাসন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত।
এদিকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেহরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যায় বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, তাহলে আরও হামলা চালানো হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ইরানের বিরুদ্ধে আরও হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
ইসরায়েলের ছোড়া প্রজেক্টাইল ধ্বংস করল ইরান
ইসরায়েলের ছোড়া প্রজেক্টাইল ধ্বংস করেছে ইরান। দেশটির সেনাবাহিনী আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে এসবের মোকাবিলা করেছে। এসব অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট সফলভাবে ইসরায়েলের ছোড়া ড্রোন ধ্বংস করেছে। আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে তাদের ছোড়া ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রো এয়ার ভেহিকলসের (এমএভি) মোকাবিলা করা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রথমে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই ইরানে আক্রমণ চালায়। দেশটির এ হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অসংখ্য সাধারণ নাগরিক নিহত হন। ইসরায়েলের এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলের সঙ্গে এ হামলায় যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। এই হামলার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। জবাবে ইরান প্রতিরোধমূলক পাল্টা হামলা চালায়। এতে ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনা ও কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করে। কাতারে এ ঘাঁটিটি পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি।
এ ঘটনার পর সোমবার (৩০ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে চূড়ান্তভাবে সম্মতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে, এরপরই যুদ্ধকে সমাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’
ট্রাম্প আরও জানান, প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেবে। মোট ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী সমাপ্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
তিনি লেখেন, যুদ্ধবিরতির সময় দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। আমরা ধরে নিচ্ছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে, যা অবশ্যই হবে। এ জন্য আমি ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন জানাই।
এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারত- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বছর বছর ধরে চলতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং কখনোই হবে না।’ পোস্টের শেষাংশে ট্রাম্প বলেন, ‘গড ব্লেস ইসরায়েল, গড ব্লেস ইরান, গড ব্লেস দ্য মিডল ইস্ট, গড ব্লেস দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এবং গড ব্লেস দ্য ওয়ার্ল্ড।’