বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, নিহত আরও ৩৩

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২১ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৪১

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে অন্তত আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দিনভর হামলা চালিয়ে আরও ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে এবং লেবাননে আরও দুজনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে গাজার আল-মাওয়াসির তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চলেও’ হামলা করেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২০১ জনে পৌঁছেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১৪৫ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।

ভয়াবহ মানবিক সংকটে গাজাবাসী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও অবরোধে দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মানবিক সংকট। এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ‘বড় অস্ত্র’। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের চেয়েও বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে অনাহার। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের এমনই দুঃসহ জীবনের করুণ চিত্র উঠে এসেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লাখো মানুষ মৃত্যুর মুখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে বেঁচে থাকার ন্যূনতম জিনিসও এখন অনেকের নাগালের বাইরে।

অক্সফামের জরিপ বলছে, গাজায় শিশুদের একটি বড় অংশ দিনে এক বেলারও কম খাবার পাচ্ছে। অনেক বাবা-মা নিজের খাবার ত্যাগ করে সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন এবং নিজেরা অভুক্ত থাকছেন।

যু্দ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তা প্রায় শেষ। উদভ্রান্তের মতো ত্রাণ দেওয়া তাঁবুগুলোতে খালি হাঁড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার মানুষ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ শতাংশ।

৪৪ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি বলেন, ‘আমি প্রায়ই আমার নিজের খাবার থেকে ছেলেকে ভাগ দিই। এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাব- ধীরে ধীরে এই অনাহার আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোও চরম সংকটে। চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে অনেক সময় রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দেইর আল-বালাহর চিকিৎসাকর্মী আমান্দে বাজেরোল জানান, বার্ন ক্লিনিকগুলোতে দিনপ্রতি ১০ জনের বেশি রোগী নেওয়া হচ্ছে না, কারণ ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।

গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার ওপর পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বারবার জানিয়ে আসছে ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

ইসরায়েলের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গাজায় এই অবরোধ দিয়েছেন তারা, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই দাবির বিপরীতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ, মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হচ্ছে, যা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরির নামে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ভূমি দখলের আশঙ্কা দিনে দিনে প্রবল হচ্ছে।

‘ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যা’

অভিযানসংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তাদের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজায় ১৫ জন চিকিৎসক নিহত হন। ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত করে বলেছে, তাদের নির্দেশ-সংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি ও আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এ ঘটনা ঘটে।

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তদন্তে এ ঘটনার বেশ কিছু ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। তদন্তের সময় অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর