দক্ষিণ গাজার শহর রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেয়া নির্দেশের পর পরই রাফাহ শহরের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আইসিজের রায় ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে রাফা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত শাবউরা ক্যাম্পে ইসরায়েলের সামরিক বিমান দফায় দফায় হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা কুয়েত হাসপাতালের একজন স্থানীয় কর্মী বিবিসিকে বলেছেন, ‘হামলার তীব্রতার কারণে উদ্ধারকর্মীরা অভিযানস্থলে পৌঁছতে পারেনি।’
ইসরায়েল প্রায় তিন সপ্তাহ আগে রাফাতে একটি দীর্ঘ-প্রত্যাশিত হামলা শুরু করে। তারা সেখানে বাকি হামাস যোদ্ধাদের ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তাদের দাবি, ইসরায়েলি জিম্মিদেরও এ শহরে রাখা হয়েছে।
অবিলম্বে দক্ষিণ গাজার শহর রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে শুক্রবার ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।
দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক জরুরি রায়ে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয় জাতিসংঘের শীর্ষ এ আদালত।
ইসরায়েলের ওপর আদালতের এই রায় কার্যকরের কোনো উপায় না থাকলেও এ রায়টি বিশ্ব থেকে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করার একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রায়ে সামরিক অভিযান বন্ধের পাশাপাশি রাফায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য মিশর সীমান্ত খুলে দেয়া এবং তদন্তের স্বার্থে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়ার মতো নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এসব আদেশ পালনের অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে ইসরায়েলকে আইসিজেতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে ৮ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহ থেকে পালিয়েছে।
এদিকে আইসিজের শুক্রবারের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রধান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যার অভিযোগ মিথ্যা, আপত্তিকর এবং নৈতিকভাবে বিরোধী।’
বিবৃতিটি বলা হয়, ‘৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করতে এবং আমাদের জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে একটি প্রতিরক্ষামূলক এবং ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ শুরু করেছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাবে উপত্যকায় ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল।
দেশটির হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৩৫ হাজার ৮০০ মানুষ। উপত্যকায় আহত হয়েছে ৮০ হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।
এ ছাড়া ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভাষ্য, গাজায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।