নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি সমর্থন দেয়ার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব-নিকাশ তেমনটাই দাঁড়াচ্ছে।
এদিকে জাতীয় ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিনের (এমডব্লিউএম) সঙ্গে হাত মেলাবে বলে জানিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)।
জিও নিউজ জানায়, এমডব্লিউএম প্রধান আল্লামা রাজা নাসির আব্বাসও বলেছেন, তার দল নিঃশর্তে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে।
তবে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে মাত্র একটি আসনে জয় পাওয়া এমডব্লিউএমের সঙ্গে জোট করলে তা পিটিআইয়ের সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট হবে না। সরকার গঠন করতে হলে ন্যূনতম ১৩৪ আসন দরকার। অপরদিকে পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট করলে তারাই সরকার গঠন করতে পারবে।
পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো মঙ্গলবার ইসলামাবাদে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, নতুন সরকার গঠনে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এনকে সমর্থন দিচ্ছে পিপিপি। তবে দলটি সরকারে যোগ দেবে না।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিষদে পিপিপির চেয়ে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) বেশি আসন রয়েছে। কিন্তু পিটিআই যেহেতু পিপিপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যুক্ত না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তাই দেশে পিটিআই বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই।’
বিলাওয়াল বলেন, ‘কেবল পিএমএল-এনই তাদেরকে জোট সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পিপিপি কেন্দ্রে সরকার গঠনের মতো অবস্থায় নেই। সে কারণে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে আগ্রহী নই।
‘পিপিডি (পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট) ২-এর মতো একটি সরকারের অংশ হবে না পিপিপি।’
পিএমএল-এন সরকারের অংশ হওয়ার পরিবর্তে পিপিপি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পরিষদের স্পিকারের পদ চাইবেন বলে জানিয়েছেন বিলাওয়াল।
এমডব্লিউএম’র সঙ্গে হাত মেলাবে পিটিআই
মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, ‘দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের স্পষ্ট বার্তা- যারা নির্বাচনে জিতেছে তাদের সরকার গঠনের অধিকার আছে। আর সেই লক্ষ্যে এমডব্লিউএম-এর সঙ্গে হাত মেলাবে পিটিআই।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পিএমএল-এন, পিপিপি এবং এমকিউএম-পি’র সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা নাকচ করেছেন। তিনি বরং জামায়াত-ই-ইসলামির (জেআই) সঙ্গে পিটিআইকে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় জোট গঠন করতে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য দলের রাজনৈতিক সংগ্রাম চলমান রাখতে পিএমএল-এন, পিপিপি এবং এমকিউএম-পি ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দলের কাছেই যাওয়ার এখতিয়ার আমাকে দিয়েছেন ইমরান খান।’
৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পার্লামেন্টে ৯২টি আসন পেয়েছেন। অপরদিকে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বের দল পিএমএল-এন পেয়েছে ৭৯টি এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি।
সরকার গঠনের জন্য এককভাবে কোনো দল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পিএমএল-এন এবং পিপিপি উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা জাতীয় পরিষদে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পাওয়ার পর এখন কোনো একটি দলে যোগ দেয়ার জন্য সময় পাবেন ৭২ ঘণ্টা।
এ অবস্থায় পিটিআই-কে ইতোমধ্যে এমডব্লিউএম-এর সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। জাতীয় পরিষদে দলটির আছে মাত্র একটি আসন। পাঞ্জাবে সরকার গড়তে হলে দলটিকে স্বতন্ত্রদের পাশাপাশি অন্যান্য দলের সঙ্গেও যোগ দিতে হবে।
পিটিআই-এর বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলি খান পৃথক বিবৃতিতে বলেছেন, দল প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য প্রার্থীর পাশপাশি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ার স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদগুলোর জন্য প্রার্থীর নাম বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ঘোষণা করবে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ২৬৫ আসনের মধ্যে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯২ আসন। এরপরই পিএমএল-এন ও পিপিপি পেয়েছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৫৪ আসন। কোনো দলই জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে জোটই একমাত্র পথ।