ভারতের উত্তরাখণ্ডে নির্মাণাধীন টানেল ধসে পড়ার ঘটনায় আটকা পড়া ৪১ শ্রমিককে এখনও উদ্ধার করা যায়নি, এ নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী বাহিনী।
সময় যতই গড়াচ্ছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে ততই। তারা কী অবস্থায় সেখানে আছেন তা নিয়েও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নিশ্চিত করে জানা যাচ্ছে না। তবে বলা হচ্ছে, তারা ভালো আছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারী কর্মীরা পাহাড়ের চূড়া থেকে একটি গর্ত খুঁড়ে ওই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু করছেন রোববার। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে হাই-পারফরম্যান্স ড্রিলিং মেশিন আনার পর এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তাদের একটি দল এবং বিশেষজ্ঞরা শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য পাঁচটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ভাস্কর খুলবে বলেন, বিশেষজ্ঞরা আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছাতে পাঁচটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। সমন্বিত প্রচেষ্টায় চার-পাঁচ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
প্রতিবেদন বলছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারকাজ শুক্রবারের পর থেকে আর এগোয়নি। টানা আট দিন ধরে ওই ভেঙে পড়া টানেলে আটকে আছেন ৪১ জন শ্রমিক। শুক্রবার বিকেলে টানেলে ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার সময় আচমকা তীব্র শব্দ কানে আসে। ভেতরে আবার কোথাও ধস নামে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ থামিয়ে দেয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারীরা এত দিন সামনের দিক থেকে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে টানেলের কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। এবার ওপর দিক থেকে লম্বালম্বিভাবে খোঁড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আবার নিচ থেকে একটি বিশেষ কোণ করে খোঁড়া হবে কি না, তা-ও ভেবে দেখা হচ্ছে।
বর্ডার রোডস্ অর্গানাইজেশন (বিআরও) সিল্কিয়ারা পর্যন্ত নতুন একটি রাস্তা তৈরি করছে। রোববার বিকেলের মধ্যে সেই রাস্তার কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী উদ্ধারকারীরা। সেই রাস্তার মাধ্যমেই টানেলে পৌঁছনো সহজ হবে।
টানেলে ৬০ মিটার গভীরে আটকে আছেন শ্রমিকেরা। এখনও পর্যন্ত খোঁড়া গেছে মাত্র ২৪ মিটার। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তার মধ্যে দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আটকে থাকা ৪০ জনই সুস্থ এবং নিরাপদ আছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পাইপের মাধ্যমেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও তারা কথা বলতে পারছেন।
উত্তরাণ্ডের সিল্কিয়ারা থেকে উত্তরকাশীর দণ্ডালগাঁওয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষার জন্য তৈরি করা হচ্ছে এই টানেল। চারধাম প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন এ টানেলটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে উত্তরকাশী থেকে যমুনোত্রী ধাম যাওয়ার দূরত্ব কমবে ২৬ কিলোমিটার।
চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ টানেলের ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অংশ গত ১২ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে ভেঙে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে থানায় খবর দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এরপর পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত দেয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।