বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারে ক্যামেরন, ব্রিটেনের রাজনীতিতে আলোড়ন

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১৯:১৬

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে সোমবার বরখাস্ত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এর দুই ঘণ্টা পর পদত্যাগ করেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী জেসি নরম্যান। অন্যদিকে সুনাক সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এসব পদক্ষেপ নিয়ে বিরোধী দল লেবার পার্টি কোমর বেঁধে সমালোচনায় মুখর হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী মিছিলকারীদের প্রতি বিষোদ্গার করে পত্রিকায় কলাম লেখার জেরে বরখাস্ত হয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান। অন্যদিকে সুনাক সরকারের মন্ত্রিসভায় ফিরেছেন ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তাকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় রদবদলের অংশ হিসেবে সুনাক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিবিসি, রয়টার্সসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভায় এমন বড় ধরনের রদবদলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে।

সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তার সামনে দুটি বিকল্প রাখা হয়েছিল- হয় তিনি পদত্যাগ করবেন, নয়তো প্রধানমন্ত্রী নিজে তাকে বরখাস্তের নোটিশ দেবেন। ব্রেভারম্যান প্রথম প্রস্তাবটিই বেছে নিয়েছেন।

দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর এক বিবৃতিতে সুয়েলা ব্রেভারম্যান বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো আমার জীবনে সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল। যথাযথ সময়ে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।’

ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার। ওইদিন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে বিশাল মিছিল বের করেন ব্রিটেনের ফিলিস্তিনপন্থীরা। মিছিলে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও স্লোগান দেয়া এবং জিহাদের আহ্বান জানানোর অভিযোগে অন্তত ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ।

ঘটনার পরদিন পত্রিকায় একটি কলাম লেখেন ব্রেভারম্যান। কলামে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিলকারীদের ‘বিদ্বেষ প্রচারকারী’ আখ্যা দেন তিনি। বলেন, ‘গতকাল লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলের নামে যে সহিংসতা ও আগ্রাসী মনোভাবের প্রদর্শন আমরা দেখেছি, তা কাম্য নয়।

‘মিছিলে বিক্ষোভকারীরা যেসব স্লোগান দিয়েছেন, যেসব প্লাকার্ড ও সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই উসকানিমূলক; কিছুক্ষেত্রে তা অপরাধমূলকও। শুধু ইহুদিবিদ্বেষ নয়, যেকোনো ধরনের বর্ণবিদ্বেষই আসলে সন্ত্রাসবাদের বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে আমাদের আইন প্রণয়ন করা জরুরি।’

সে সময় আরও বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার না করা ও তাদের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব প্রদর্শনের জন্য ব্রিটিশ পুলিশেরও সমালোচনা করেন তিনি।

তার এই কলাম প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। বিভিন্ন মাধ্যমে কনজারভেটিভ পার্টিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও বিরোধী দলের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে সরকারি দলটির অনেকেই ব্রেভারম্যানের ওপর ক্ষেপে যান। এ অবস্থায় দলের ভেতরে ও বাইরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই সুয়েলার প্রতি প্রধানমন্ত্রী সুনাক কঠোর হয়েছেন বলে ধারণা দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তবে সুয়েলার বিতর্কিত মন্তব্য এটিই প্রথম নয়। আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘনের দায় কাঁধে নিয়ে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের মন্ত্রিসভায়ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল তাকে।

তার জায়গায় নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। আর নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনকে দায়িত্ব দিয়েছেন সুনাক।

নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে ক্যামেরন বলেন, ‘যদিও আমি গত সাত বছর ধরে সামনের সারির রাজনীতির বাইরে ছিলাম, তারপরও আশা করছি, আমার এগারো বছরের রাজনীতি ও ছয় বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি (বর্তমান) প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করতে পারব।’

সুনাকের কিছু সিদ্ধান্তের প্রতি ব্যক্তিগত দ্বিমত থাকলেও ওই পোস্টে তাকে একজন দক্ষ ও যোগ্য নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ক্যামেরন।

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্যামেরন।

এদিকে সুয়েলা ব্রেভারম্যান বরখাস্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পর পদত্যাগ করেছেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী জেসি নরম্যান। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের উদ্দেশে এক এক্স বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করা অনেক বড় সম্মানের একটি ব্যাপার।

‘আপনি আপনার শান্ত, মনোযোগী এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বগুণ দিয়ে দেশের সেবা করছেন। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

এদিকে সুয়েলার বরখাস্তের বিষয়টি আসন্ন নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিকে আরও কঠিন অবস্থায় ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী স্যার জ্যাকব রিস-মগ।

জিবি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সুয়েলাকে সরিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। এর ফলে আসন্ন নির্বাচনে জেতা কনজারভেটিভ পার্টির জন্য আরও কঠিন হবে। কারণ ব্রিটিশ ভোটাররা আসলে কী চান, সুয়েলা তা বুঝতেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করছিলেন তিনি।’

ডেভিড ক্যামেরনকে সরাকারে আনাটা করজারভেটিভ পার্টির জন্য বিপদের কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন জ্যাকব। এ বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘ক্ষমতায় থাকাকালে ব্রেক্সিট ইস্যুতে কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিটের বিপক্ষে) নিয়েছিলেন মি. ক্যামেরন। তাকে মন্ত্রিসভায় আনার ফলে দেশে ফের ব্রেক্সিটবিরোধী একটি আন্দোলন শুরু হতে পারে- এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’

ক্যামেরনকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনার কঠোর সমালোচনা করে লেবার পার্টির নেতারা এটিকে সরকারের ‘হতাশার চরম অবস্থা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

লেবার পার্টির এমপি ও ব্রিটেনের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ বিষয়ে বলেন, ‘ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন একেবারে বিপর্যয়কর। তাকে নিয়োগের মানে এই দাঁড়ায়, প্রতিভা ও ধারণাহীন বর্তমান সরকারের এটি একেবারে শেষবেলার হাঁসফাঁস।’

এ বিভাগের আরো খবর