বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হামাস, কাসাম ব্রিগেড ও ইসরায়েলের হামলা নিয়ে যা জানা প্রয়োজন

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:২৮

শক্তি-সামর্থ্যে পশ্চিমা বিশ্বের বহু রাষ্ট্রকে বিস্মিত করেছে কাসাম বিগ্রেড। ইতোমধ্যে সংগঠনটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও মিসর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গাজায় হামাসের সশস্ত্র মিত্র গোষ্ঠী কাসাম ব্রিগেড ইসরায়েলের বড় মাথাব্যথার কারণ হিসেবে পরিণত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরও হামাসের পক্ষে ইসরায়েলে হামলা চালায় কাসাম ব্রিগেডর যোদ্ধারা। ওই হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অন্তত ১৪০০ নাগরিক প্রাণ হারান। একই সঙ্গে দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দিও করে তারা।

এরপর গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের অনবরত বোমা হামলায় ৭ হাজারের অধিক বেসামরিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই হচ্ছে নারী ও শিশু। ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।

২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে এখন পর্যন্ত ছয়টি বড় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০১২ সালের বিমান হামলায় কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান আহমদ জাবারিকে হত্যা করে ইসরায়েল। সে সময় থেকেই ইসরায়েলের প্রতি সংগঠনটির ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চলেছে।

হামাসের সৃষ্টি যেভাবে

১৯৮৭ সালে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসেবে শেখ আহমেদ ইয়াসিন ও তার সহযোগী আবদুল আজিজ আল-রানতিসি হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০১৭ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হামাস।

হামাস-এর পূর্ণরূপ হলো হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া বা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন। হামাস শব্দের অর্থ উদ্যম।

প্রথম ইন্তিফাদার সময় ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে যখন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, সে সময় আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। তবে ফিলিস্তিনিদের সেই বিক্ষোভের সশস্ত্র প্রতিবাদ জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই ঘটনার সময় ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়ে, কেউ কেউ ছোট অস্ত্রও ব্যবহার করে।

১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের পর এর বিরোধিতা ও ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করতে সশস্ত্র প্রতিরোধের পক্ষে কাজ শুরু করে হামাস।

২০০৬ সালে সংগঠনটি গাজার সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে জিতলেও ক্ষমতাসীন ফাতাহ পার্টি কোনো সশস্ত্র সংগঠনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি ছিল না। ফলে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর কাছ থেকে এক প্রকার ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় হামাস।

ওই ঘটনার পর ফিলিস্তিনের হামাস-শাসিত অঞ্চলে ভূমি, জল ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, যা এখনও কার্যকর। এর মাধ্যমে আসলে ফিলিস্তিনে কে বা কী যাবে বা আসবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। ওই অবরোধের কারণে জল-স্থল-আকাশ সবদিক থেকেই একটি উন্মুক্ত কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছে ফিলিস্তিন।

বর্তমানে হামাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ ইসমাইল হানিয়া।

কাসাম ব্রিগেড

১৯৮০ ও নব্বইয়ের দশকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস যোদ্ধারা যেসব সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেগুলোকে কেন্দ্রীভূত ও একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ১৯৯২ সালে সামরিক বিভাগ চালু করে সংগঠনটি। এই সংগঠনের নামই কাসাম ব্রিগেড।

ব্রিটিশ শাসনামলে ফিলিস্তিনের ইজেদ্দিন আল-কাসাম নামের এক মুসলিম ধর্ম প্রচারকের নামানুসারে সংগঠনটির নামকরণ করা হয়। ১৯৩০ সালে আল-কাসাম ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’ নামে ব্রিটিশ এবং ইহুদি আধিপত্যবাদ বিরোধী একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।

দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় থেকে কাসাম ব্রিগেড ইসরাইলের আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। শক্তি-সামর্থ্যে পশ্চিমা বিশ্বের বহু রাষ্ট্রকে বিস্মিত করেছে এ সংগঠনটি। ইতোমধ্যে সংগঠনটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও মিসর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিগেড নেতা মোহাম্মদ দেইফকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত দুই সপ্তাহের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। ছবি: সংগৃহীত

কাসাম ব্রিগেড হামাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও তারা হামাসের অঙ্গ সংগঠন, তবুও তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে।

হামাসের বক্তব্য অনুসারে, ‘কাসাম ব্রিগেড একটি আলাদা সশস্ত্র সংগঠন এবং এর নিজস্ব নেতা রয়েছে। সংগঠনটি হামাসের আদেশ গ্রহণ করে না এবং নিজেদের তথ্য ও অগ্রগতির কথাও হামাস নেতাদের জানায় না।’

সংগঠনে যোদ্ধাদের পরিচিতি ও তাদের অবস্থান মৃত্যু পর্যন্ত গোপন থাকে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তারা কালো মুখোশ পরে যার ওপর সবুজ বেল্ট থাকে।

কাসাম ব্রিগেড স্বাধীন শাখা হিসেবে কাজ করে, যে কারণে অনেক জ্যেষ্ঠ নেতারাও অন্য শাখার খবর জানেন না। এই শাখাটির নেতার মৃত্যুর হলে সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই নেতা নির্বাচন করে।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারত্ব নিরসনে মাহমুদ আব্বাস সরকার ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ফাতাহ পার্টি। আর কাসাম ব্রিগেডের সহযোগিতায় বারবার ইসরায়েলি অত্যাচার রুখে দেয়ার কারণে ক্রমেই উপত্যকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হামাস।

কাসাম ব্রিগেডের সামর্থ্য ও কর্মকাণ্ড

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্রিগেডে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।

২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের পর নিজেদের সামরিক শাখাগুলোতে আরও শক্তি বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে হামাস। এ ব্যাপারে ইরানের কাছ থেকে হামাস আর্থিক সহায়তা পায় বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

সিআইএর তথ্য অনুসারে, স্থানীয়ভাবে কিছু অস্ত্র তৈরি করে থাকে কাসাম ব্রিগেড। এ ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমেও অস্ত্রের সরবরাহ হয় সংগঠনটিতে।

সম্প্রতি তারা নিজেদের অস্ত্রবহরে রকেট যুক্ত করেছে। এ ছাড়া হামলা ও তথ্য সংগ্রহের কাজে বর্তমানে ড্রোনও ব্যবহার করছে সংগঠনটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ২০২১ সালেই হামাস, কাসাম ব্রিগেডসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলো ইসরায়েলে ৪ হাজার চর শর বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে।

কাসাম ব্রিগেডের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), রকেট লঞ্চার, অ্যান্টিট্যাঙ্ক মিসাইল ও মর্টারের মতো সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও সংগঠনটি গুপ্তচারণ করতে পছন্দ করে। চলাচলে তাদের প্রথম পছন্দ টানেল পথ, যাতে শত্রু সহজে তাদের শনাক্ত করতে না পারে।

৭ অক্টোবর যে কারণে হামাসের হামলা

আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের আইন লঙ্ঘন ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ক্রমবর্ধমান বসতি উচ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় বলে জানায় হামাস।

শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের জেলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য দরকষাকষি করতে কিছু ইসরায়েলিকে অপহরণ করেছে বলে বিবৃতিতে জানায় তারা।

গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান কী

গাজায় চলমান সংকটে হামাসের প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী করতে গাজার অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও একযোগে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদের ‘সারায়া আল-কুদস ব্রিগেড’ উপত্যকার প্রধান সংগঠনগুলোর একটি। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংগঠনটি ২৩ বার ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে।

এ ছাড়া আবু আলী মুস্তাফা ব্রিগেডের মাধ্যমে গাজায় সক্রিয় সামরিক উপস্থিতি রয়েছে ‘পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিন’ নামের আরেকটি সংগঠনের। অফিশিয়াল টেলিগ্রাম বার্তার মাধ্যমে তারাও হামাসের আহ্বানে যোগ দিচ্ছে বলে খবরে জানা গেছে।

টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সম্প্রতি মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে উপত্যকায়, তবে জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েল অনুমতি না দেয়ায় ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে গাজা।

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিসরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়।

এ বিভাগের আরো খবর