জ্বালানির অভাবে একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গাজা উপত্যকা। এদিকে ফিলিস্তিনে স্থলভোগ দিয়ে হামলা চালাতে গাজা সীমান্তে কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান বুধবার ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
বিবিসি জানায়, হামাসের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েল গাজায় পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাবারসহ সব প্রয়োজনীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল গাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে চাইলে তাকে জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অবশ্য জেনারেটর চালানোর মতো জ্বালানিও সেখানে নেই বললেই চলে।
এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। আর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় প্রাণহানি হাজার ছাড়িয়েছে।
স্থল হামলার প্রস্তুতি
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত। এরই অংশ হিসেবে গাজা সীমান্তে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘গাজার চারপাশে পুনরায় প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করা হয়েছে। গাজা সীমান্তের কাছে পদাতিক, সাঁজোয়া সেনা ও আর্টিলারি সেনাদল পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে আরও প্রায় ৩ লাখ সংরক্ষিত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি রয়েছে এবং ইসরায়েলি সরকার তাদের যে মিশন দিয়েছে তা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত হচ্ছে।
‘এই লড়াইয়ের শেষে ভবিষ্যতে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে হামাসের যাতে আর কোনো সামরিক সক্ষমতা অবশিষ্ট না থাকে- তা নিশ্চিত করাই বর্তমান মিশনের লক্ষ্য।’
ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান
গোলাবারুদ বোঝাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিমানটি গতকাল ইসরায়েলে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রেস সার্ভিস এ কথা জানিয়েছে।
তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাস্ত্র বোঝাই প্রথম বিমানটি ইসরায়েলে অবতরণ করেছে। উন্নত গোলাবারুদসহ বিমানটি নেভাটিম বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে।
ইসরায়েলি সেনারা যখন স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এসব গোলাবারুদ পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র।
অব্যাহত বিমান হামলা
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী আকাশপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, ২৪ ঘণ্টায় গাজার সাড়ে ৪০০ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা।
এছাড়া হামাসের বিরুদ্ধে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়- এমন রকেট লঞ্চারও ব্যবহার করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০০৬ সালের সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকায় এ ধরনের লঞ্চার ব্যবহার করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের বিমান বাহিনী বলেছে, যুদ্ধ বিমানগুলো গাজার বাইত হানুন এলাকায় ৮০টি স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ব্যাংকের শাখা অফিস। এ সব অফিসগুলো সংঘাত কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে ব্যবহার করত হামাস। মাটির নিচে থাকা একটি টানেল এবং হামাসের দুটি অভিযান পরিচালনা কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া হামাসের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো, এমন দুটি স্থাপনাতেও হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে সিরিয়া থেকেও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়েছিল। তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনী কিছু জানাতে পারেনি। লেবানন থেকে হেজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও পাল্টা জবাব দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।