জ্বলছে ফিলিস্তিনের গাজা, জ্বলছে ইসরায়েল। বহু বছরের পুরোনো দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে দু পক্ষকেই। দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলের হামলার শিকার হতে থাকা গাজার শাসক দল হামাস আকস্মিকভাবে এবার যে হামলা চালিয়েছে, তাতে ইসরায়েলের সব গোয়েন্দা তথ্যই যেন নাকানি-চুবানি খেয়েছে।
চিরশত্রু ইসরায়েলকে অল্প সময়ের জন্য হলেও ‘ঘোল খাওয়ানোর খেলায়’ নামটি বারবার সামনে আসছে তিনি হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ। এক চোখ অন্ধ, এক হাত নেই, এই দেইফকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে ইসরায়েল।
রয়টার্স বলছে, গাজা উপত্যকা থেকে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রচারিত একটি অডিও টেপে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড দেইফের কণ্ঠে ভেসে আসে- জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি হামলার জন্য এই প্রতিদান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে মোহাম্মদ দেইফকে বলা হচ্ছে ইসরায়েলের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তার নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত তথ্য এসেছে।
২০২১ সাল থেকে অন্তত সাতবার ইসরায়েলি হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া দেইফ খুব কমই কথা বলেন এবং জনসমক্ষে কখনও উপস্থিত হন না। তাই যখন হামাসের টিভি চ্যানেল ঘোষণা করে, তিনি শনিবার বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন; ফিলিস্তিনিরা জানত যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটছে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গোপনে হামাসের হামলার ছক এই দেইফই বুনেছিলেন। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’তিনি। দেইফ ফিলিস্তিনের নাগরিক। ২০২২ থেকে হামাসের নেতা তিনি।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেইফের একটি চোখ নেই। ২০ বছর আগে এক হামলায়তার এক চোখ, এক হাত ও এক পা হারিয়েছেন তিনি। তারপর থেকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন এই হামাস নেতা।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেয়া দেইফের জন্মের সময় গাজা ছিল মিশরের দখলে। পরে তা দখলে নেয় ইসরায়েল।
এবারের সংঘাতে ইসরায়েল সেনারা গাজার সংলগ্ন আল ফুকরানে ২০০টি টার্গেটে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই টার্গেটগুলোর মধ্যে অন্যতম দেইফের বাবার বাড়ি। হামলায় তার বাড়িতে শিশু, দেইফের বাবা, ভাইরাও নিহত হয়েছেন।
তবে কেউ জানে না যে দেইফ এখন কোথায়? এ যাবৎকালে বহুবার হুইলচেয়ারে থাকা হামাস নেতা দেইফকে হত্যার চেষ্টা করেছে ইসরায়েলের গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ। অল্পের জন্য পালিয়েছেন তিনি। গাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেইফ আশির দশকে যোগ দেন।
প্রশ্ন উঠছে, কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেইফ এই হামলার ছক এঁকেছেন? এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালে পবিত্র আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যে হামলা চালানো হয়, তার প্রতিশোধ নিতেই হামাসের এই হামলা।
গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এরপর পাল্টা হামাল শুরু করে ইসরায়েলও। হামলা-পাল্টা হামলায় প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪,৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার ইসরায়েলি নিহত এবং ৩,৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।