বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আনুগত্য প্রকাশে ওয়াগনার যোদ্ধাদের পুতিনের চাপ

ইউক্রেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ডেমোক্রেটিক ইনিশিয়েটিভস ফাউন্ডেশনের প্রধান পেট্রো বুরকোভস্কি বলেন, ‘ওয়াগনার যোদ্ধাদের অনেকেই প্রিগোজিনের একনিষ্ঠ অনুসারী। এখন প্রাণভয়ে বা লাভের আশায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও ভবিষ্যতে তারাই পুতিনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বুধবার নিহত হন রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপ ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ঘটনাটি অনেকেই পুতিনের বিরুদ্ধে তার গত ২৩ জুনের বিদ্রোহের পরিণাম হিসেবে দেখছেন।

প্রিগোজিন নিহত হওয়ার তিনদিনের মাথায় এবার ওয়াগনার সেনাদের প্রতি নতুন নির্দেশ জারি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য প্রকাশে ওয়াগনার সেনাদের হলফনামায় স্বাক্ষর করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু শত্রুভাবাপন্ন যোদ্ধা দলকে বুকে টেনে কতটা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে পুতিনের, তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা।

ওয়াগনার প্রধান তার ব্যক্তিগত বিমানে বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে উড্ডয়নের ৩০ মিনিটের মধ্যেই সেটি গুলি করে নামায় রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় বিমানের তিন ক্রুসহ দশ যাত্রীর সবাই নিহত হন। ওই ঘটনার পরের দিন বিধ্বস্ত বিমানটিতে প্রিগোজিনের থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুতিন।

বৃহস্পতিবার ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। সে সময় প্রিগোজিনের বিমানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শুক্রবার রাতে ওয়াগনারদের আনুগত্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে একটি ডিক্রি জারি করেছেন পুতিন। প্রাথমিকভাবে এ নির্দেশনার উদ্দেশ্য যে ওয়াগনার সেনাদের সরাসরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, সে বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওয়াগনার যোদ্ধাদের হলফনামায় বাধ্যতামূলকভাবে স্বাক্ষর করার অর্থ হলো- বাহিনীটিকে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে।

ক্রেমলিনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পুতিনের জারি করা ওই ডিক্রিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ যারা সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন বা সহায়তা করেছেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষায় ডিক্রিটি ‘আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ভিত্তি’ উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়েছে, এটি এমন এক শপথ যার ফলে দেশের কমান্ডার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে।

রাশিয়ার এ ডিক্রি ওয়াগনার যোদ্ধাদের উভয় সঙ্কটে ফেলেছে বলে মনে করেন ইউক্রেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ডেমোক্রেটিক ইনিশিয়েটিভস ফাউন্ডেশনের প্রধান পেট্রো বুরকোভস্কি। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘ওয়াগনার যোদ্ধাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং যারা আনুগত্য দেখাবে না, তাদের বিচার করার উদ্দেশ্যেই এমন ডিক্রি জারি করেছে পুতিন প্রশাসন।

‘ওয়াগনার যোদ্ধাদের প্রতি এটি স্পষ্ট বার্তা- হয় শপথ নিয়ে অস্ত্র নিজের কাছে রাখো অথবা অস্ত্র ছেড়ে দাও। হয় শপথ কর, নয়তো কারাগারে যাও।’

জুন মাসে বিদ্রোহ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনারদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, তা কার্যকর করতে ১ জুলাই পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। তবে প্রিগোজিন তা করতে চাননি। তিনি চাননি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হোক তার বাহিনী।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবে পুতিনের সমর্থন ছিল। ফলে প্রিগোজিন সম্মতি না জানানোয় দুপক্ষের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। এর রেশ ধরেই ইউক্রেনে ওয়াগনারদের পর্যাপ্ত অস্ত্র সরবরাহ করতে অসম্মতি জানায় রাশিয়া, যার পরিণতি ২৩ জুনের সেই বিদ্রোহ।

প্রিগোজিনের মৃত্যুতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারা সত্ত্বেও তার মৃত্যুর বিষয়ে এতটা নিশ্চিত হওয়ায় পুতিনের দিকে আঙুল তুলেছেন পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্যই এমন কাজ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। কারণ গত ২৩-২৪ জুন ওয়াগনারের বিদ্রোহ পুতিনের ভিত্তি যতটা নাড়িয়ে দিয়েছে, এর আগে তেমনটা আর হয়নি।

তবে বরাবরের মতো সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনা ও প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে সারা বিশ্বে অনেক জল্পনা চলছে। ঘটনাটিকে একটি নির্দিষ্ট দিকে চালিত করতে চাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।

‘এসব অভিযোগের সবই একেবারে মিথ্যা। এ ধরনের অভিযোগ করার সময় অবশ্যই যুক্তিযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে, যা তারা পারছে না।’

তবে প্রিগোজিনের সৎকার অনুষ্ঠান এ ঘটনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক বলে মনে করেন বেলারুশে কর্মরত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস-এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাইজেল গোল্ড-ডেভিস। তিনি বলেছেন, ‘পুতিন যদি প্রিগোজিনকে বিশ্বাসঘাতক-রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করেন, তাহলে তিনি তার শেষক্রিয়ায় আসবেন না।’

তবে কবে নাগাদ ওয়াগনার প্রধানের শেষক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে পেসকভ বলেছেন, ‘এ ঘটনায় সর্বোচ্চ তদন্ত হচ্ছে। সবার ডিএনএ টেস্টও করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে সৎকার অনুষ্ঠানের অনেক দেরি আছে। কবে নাগাদ তা হতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে (সাংবাদিকদের) জানিয়ে দেয়া হবে।’

তবে প্রিগোজিনের মৃত্যুর আগে আফ্রিকায় ওয়াগনার সেনারা যেসব চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে কাজ করছিল এবং তারা যে বেলারুশে দেশটির সেনাদের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ছিল, সে ক্ষেত্রে চলমান কাজগুলো ওয়াগনার যোদ্ধারা নিজেদের ‘কল্যাণে’ চালিয়ে যাবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘পরে জানানো হবে’ বলে এড়িয়ে যান পেসকভ।

কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, একজন নেতা ছাড়া কোন দিকে মোড় নেবে ওয়াগনারদের ভবিষ্যৎ?

এক্ষেত্রে বুরকোভস্কি বলছেন, ওয়াগনাররা সবসময় লাভ চায়। রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে না গ্রহণ করে সেসময় তারা প্রিগোজিনকে বেছে নেয়ার কারণ হচ্ছে, প্রিগোজিন তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা যদি এখন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তেমন সুবিধার অফার পায়, তাহলে তারা কার জন্য কোথায় ও কেন যুদ্ধ করছে, সেসবের পরোয়া না করে রাশিয়ার প্রতিই আনুগত্য প্রদর্শন করবে।

তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রশ্নে রাশিয়াও তেমন একটা কার্পণ্য করবে না বলে মনে করেন বুরকোভস্কি। তার মতে, অভিজ্ঞ এ সেনারা রাশিয়ার জন্য তাৎক্ষণিক ‘সম্পদে’ পরিণত হতে পারে।

তবে স্বল্প মেয়াদে ওয়াগনাররা রাশিয়ার কাজে লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে তারা সমস্যা সৃষ্টি করবে বলেও মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে বুরকোভস্কির মত, ‘লাভের চিন্তা করলেও অনেকেই প্রিগোজিনের একনিষ্ঠ অনুসারী। এখন প্রাণভয়ে বা লাভের আশায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও ভবিষ্যতে তারাই পুতিনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর