বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে ফের বাড়ছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার শঙ্কা

৩১ জুলাই একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রায় বাধা দেয়ার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে হরিয়ানার গুরুগ্রাম জেলা ও নুহ। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন।

চলমান বেশকিছু সাম্প্রদায়িক অসন্তোষের জেরে ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার শঙ্কা বাড়ছে।

৩১ জুলাই একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রায় বাধা দেয়ার ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে হরিয়ানার গুরুগ্রাম জেলা ও নুহ। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন।

ঘটনার ধারাবাহিকতায় ৩১ জুলাই রাতেই গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৭-এর একটি মসজিদে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সে সময় মসজিদটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়; গুলিও চালায় দৃষ্কৃতকারীরা। ঘটনার সময় মসজিদের ইমাম নিহত হন।

২০১৫ সালের পর আবারও ওই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উপক্রম হয়েছে। ২০১৪ সালে বিজেপি হরিয়ানার ক্ষমতায় আসার এক বছর পর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজ্যটি।

এদিকে এ বছরের শুরুর দিকে দুই মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার প্রধান অভিযুক্তকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

পরে প্রধান অভিযুক্ত বজরং দলকর্মী মনু মানেসার নামের ওই যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা এক ভিডিওতে ঘোষণা দেন, তিনি সোমবারের (হিন্দু) শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। এতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গুরুগ্রামের পরিস্থিতি।

সোমবারের ঘটনায় মনু মানেসারকে শোভাযাত্রায় দেখেই উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়ায় বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে পুলিশ বলছে, তিনি (মনু) সেখানে যাননি।

মহাসড়কে ধর্মীয় শোভাযাত্রায় সংঘর্ষ বাঁধার পর জরুরি অবস্থা জারি করে রাজ্য প্রশাসন

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল বিজ রয়টার্সকে বলেন, ‘দুই সম্প্রদায়ের মাঝে অবিশ্বাস ও অনাস্থার কারণে কিভাবে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার বহিঃপ্রকাশ সোমবারের শোভাযাত্রায় সংঘর্ষ।

‘পরিস্থতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকার নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফেরাতে আরও সময় লাগবে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ভিওয়ানিতে দুই মুসলিম যুবককে হত্যার ঘটনার পর থেকে মনু পলাতক। সেই মনু ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, ধর্মীয় শোভাযাত্রায় তিনি থাকবেন। এই আবহে সোমবার (৩১ জুলাই) গুরুগ্রাম অলওয়ার মহাসড়কে শোভাযাত্রা থামান কয়েকজন। এরপরই মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি গাড়ি হয় হামলাকারীদের প্রধান লক্ষ্য। সে সময় পাশের এক শিবমন্দির চত্বরে আশ্রয় নেন প্রায় ২৫০০ মানুষ।

পরে সন্ধ্যার দিকে গুরুগ্রামের সোহনা মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দাঙ্গাকারীরা। বেশকিছু বাড়িঘর, দোকানেও আগুন দেয়া হয়। ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইট-পাটকেল বর্ষণ।

দাঙ্গায় দুই নিরাপ্তাকর্মীসহ অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ২০০ জন। পরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাতেও। দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত হরিয়ানায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যেই সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহরলাল খট্টর।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। গুজব ও প্ররোচনা ঠেকাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী।

মসজিদে হামলার পর থেকে ওই রাজ্যে সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী

ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে ২০১৪ সালে বিজেপি দেশটির ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমন ঘটনা বেড়েছে।

এর আগে শুক্রবার খোলা জায়াগায় জুমার নামাজ পড়া নিয়ে এবং হিন্দু উৎসবের সময় মাংস বিক্রি নিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষার্থে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠী এগুলো নিষিদ্ধও করতে চেয়েছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দলটির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কারণে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ভয়ের মধ্যে বসবাস করছে তারা।

তবে হিন্দু যুব বাহিনী নেতা প্রবীণ বাব্বারের অভিযোগ, ‘মুসলিমরা হিন্দুদের ওই শোভাযাত্রায় হামলা করে আমাদের অনেককে হত্যা করেছে।’

হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় শুধু সমান জবাব নয়, কখনও কখনও আরও বেশি প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে।’

এ ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেছেন কংগ্রেসের নুহের আইন প্রণেতা আফতাব আহমেদ। তার দাবি, হিন্দু নেতাদের উস্কানিমূলক বিবৃতির বিষয়ে সতর্ক করার পরও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে হরিয়ানা পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে তারা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

সোমবার দুপুরে সংঘর্ষ বাঁধলে দুষ্কৃতকারীদের রোষের মুখে পড়ে একাধিক সরকারি-বেসরকারি গাড়ি

গুরুগ্রাম আগে গুরুগাঁও নামে পরিচিত ছিল। ভারতের রাজধানী দিল্লির সীমান্তে অবস্থিত এই জেলায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস।

রাজধানীর পাশে হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে ওই এলাকা। গড়ে উঠেছে সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন, বিলাসবহুল হোটেল, শপিং মল। ছোট ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বহুজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে এই অঞ্চল। গুগল, আমেরিকার এক্সপ্রেস, ডেল, স্যামসাং, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং এবং ডেলয়েটের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় এ এলাকাতেই। এ ছাড়া বিখ্যাত জাপানি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি সুজুকির প্রধান কারখানাও গুরুগ্রামের কাছে।

সহিংসতা ছড়ানোর পর মঙ্গলবার থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের বাসায় অবস্থান করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। সোমবারের ওই ঘটনার পর স্কুল-কলেজও বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রসাশন। বুধবার থেকে সেগুলো অবশ্য আবার খুলতে শুরু করেছে।

রাজধানীর পাশেই এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ সরকার আশা করছে, তা ঝুঁকিতে ফেলেছে হরিয়ানার এমন পরিস্থিতি।

দিল্লির ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের ফেলো তারা কার্থা বলেন, ‘দৃষ্কৃতকারীদের লক্ষ্য উত্তর ভারতের এই বাণিজ্যিক কেন্দ্র (হরিয়ানা)। সরকারের উচিত যেকোনো মূল্যে এই রাজ্যকে রক্ষা করা।’

এ বিভাগের আরো খবর