বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোরআন অবমাননা: জাতিসংঘের প্রস্তাবে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা

বুধবার পাস হওয়া রেজুলেশনটির বিরোধিতা করে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের যে অবস্থান, তার সঙ্গে রেজুলেশনটি সাংঘর্ষিক।

সুইডেনের একটি মসজিদের সামনে সম্প্রতি পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা মুসলিম বিশ্ব। ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে একটি রেজুলেশন পাস করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)।

রেজুলেশনে ধর্মীয় বৈষম্য, শত্রুতা, ঘৃণা বা সহিংসতা উসকে দেয়- এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ৫৭টি দেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রেজুলেশনটি উপস্থাপন করে পাকিস্তান। পরে পাকিস্তানের আহ্বানে মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকে বসে ইউএনএইচআরসি।

মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম অধ্যুষিত অনেক দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রেজুলেশনটির বিরোধিতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার পাস হওয়া রেজুলেশনটির বিরোধিতা করে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের যে অবস্থান, তার সঙ্গে রেজুলেশনটি সাংঘর্ষিক।

এ ঘটনায় সুইডেন তাৎক্ষণিক নিন্দা জানালেও দেশটির মতপ্রকাশ ও বিক্ষোভের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে।

এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার বলেছে, সংবিধান সবাইকে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার দিয়েছে। কোরআন পুড়িয়ে যারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাদেরও সাংবিধানিক অধিকার আছে। সে কারণেই তাদের বাধা দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফন্ত বলেন, ‘মানবাধিকারই মানুষকে রক্ষা করে; কোনো ধর্ম, মতবাদ, বিশ্বাস বা তাদের প্রতীক নয়। কোনটি পবিত্র- তা কোনো রাষ্ট্র, এমনকি জাতিসংঘও সঙ্গায়িত করতে পারে না।’

মঙ্গলবার ইউএনএইচআরসির বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সহিংসতা উসকে দেয়ার উপায় হিসেবে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। এগুলো কেন ঘটছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’

সুইডেন সরকারের সম্মতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলেও সে সময় অভিযোগ করেন তিনি।

এ সময় ইরান, সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রীরা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, ‘এভাবে আর চুপ করে থাকা যায় না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এমন অপব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক ইউএনএইচআরসিকে বলেন, ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়া, ইহুদিবিদ্বেষ, খ্রিস্টানদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন আহমেদি, ইয়াজেদি, বাহাইদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণও অন্যায়। এসব কিছুই অন্যায়। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন।’

আলোচনা, শিক্ষা ও ধর্মীয় আদান-প্রদানের মাধ্যমে হেটস্পিচ বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন ভলকার তুর্ক। এজন্য বিশ্বের সব দেশকে এগিয়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তার মতে, ‘কোরআন পোড়ানোর ঘটনা সার্বিকভাবে বিদ্বেষ তৈরি করেছে, সহিংসতার জন্ম দিয়েছে; সেসঙ্গে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত, যা বন্ধ হওয়া দরকার।’

ইউএনএইচআরসিতে হওয়া এ ভোটাভুটি আইনত বাধ্যতামূলক না হলেও বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক বন্ধন তৈরিতে এর ভূমিকা রয়েছে।

রেজুলেশনে ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান আইন ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিরোধ, তার বিচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ সমর্থনে বাধা সৃষ্টি করতে যথেষ্ট কিনা’ তা পর্যালোচনা করে দেখতে এবং যদি কোনো ফাঁক থাকে, তা পূরণ করতে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওই ভোটে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বড় প্রভাব দেখা গেছে। ফলে পশ্চিমা দেশগুলোকে বড় হার দেখতে হয়েছে।

রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ২৮টি দেশ। যেখানে বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ১২টি। আর সাতটি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

পক্ষে ভোট দিয়েছে যেসব দেশ: আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাউই, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।

বিপক্ষে ভোট দিয়েছে: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো ও রোমানিয়া।

ভোটদানে বিরত ছিল: বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে ও নেপাল।

গত ২৮ জুন ঈদুল আজহার দিন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের প্রধান মসজিদের বাইরে পবিত্র কোনআন পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন দুই যুবক। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ইরাক থেকে আসা অভিবাসী সালমান মোমিকা ও তার সঙ্গে থাকা আরেকজন ওই কাজ করেন।

সুইডেনের সরকারি টেলিভিশন এসটিভি জানায়, কোরআন নিষিদ্ধের দাবিতে ওই কাজ করেন তারা। এর জন্য তারা আদালতে আবেদন করলে দেশটির আদালত তাদের অনুমতি দেয়। তারপর ঘটনার দিন পুলিশের উপস্থিতিতে তারা কোরআন পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। প্রথমে তারা কোরআনের পাতা ছেঁড়েন, তারপর তাতে আগুন দেন।

সালমানকে এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন ওই ব্যক্তি। প্রায় দুই শ’ মানুষ এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়।

ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গোটা মুসলিম বিশ্ব। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সুইডেন সরকার।

মুসলিম বিশ্বের দাবি, এ ঘটনা তাদের বিশ্বাসের ওপর আঘাত। ব্যক্তির অধিকার কতদূর পর্যন্ত মেনে নেয়া হবে- এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।

মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ বৈঠক শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। অন্য দেশগুলোও সেখানে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।

এ বিভাগের আরো খবর