ভারতের ইতিহাসে বিরতম ট্রেন দুর্ঘটনা। এটিকে একুশ শতকের সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিয়তির পরিহাস কাকে বলে, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বাবা-মা কোনোক্রমে রক্ষা পেলেও শেষ হয়ে গিয়েছে তাদের সন্তানরা। নিজে বেঁচে গেলেও এখন সেসব বাবা-মায়ের সব হারানোর বুক ফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনাস্থল ও আশেপাশের হাসপাতালগুলো।
৪০ বছর বয়সী লালজি সাগাই। বর্তমানে তার বড় ছেলের ঠাঁই হয়েছে সরো হাসপাতালের মর্গে। আর ছেলের মরদেহ পেতে হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন মা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বিহারের মধুবনীর বাসিন্দা লালজি সাগাই। উন্নত জীবনের আশা নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা।
পেশায় নিরাপত্তাকর্মী লালজি ভেবেছিলেন তার মতোই কাজ করবে দুই সন্তান। কিন্তু নিয়তির লিখন ছিল ভিন্ন।
চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাধারণ কোচের যাত্রী ছিলেন মা ও দুই ছেলে। শুক্রবারের দুর্ঘটনায় লালজির ছোট ছেলে ইন্দর বেঁচে গেলেও বড় ছেলে সুন্দরের মৃত্যু হয়।
বালেশ্বরের সরোতে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিজের ছেলের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে লালজি সাগাই বলেন, ‘আমরা ৯ জনের একটি দল চেন্নাই যাচ্ছিলাম। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করি আমি। যেহেতু আমাদের গ্রামে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, তাই আমি পরিবারের জন্য অতিরিক্ত আয় নিশ্চিত করতে দুই ছেলেকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু নিয়তি আমাদের জন্য এমন কিছু পরিকল্পনা করেছিল, যা আমি দুঃস্বপ্নেও অনুমান করতে পারিনি।’
সাগাই যখন কথা বলছিলেন, কষ্টে তার গলা বুজে আসছিল। বুকফাঁটা কান্না আটকে মধ্যবয়সী মা বলতে থাকেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার বড় ছেলে মারা গিয়েছে। নিজের হাতে ছেলের লাশ সরিয়েছি।’
খরচ যাই হোক, ছেলের মরদেহ নিয়ে গ্রামে ফিরতে চান তিনি।