ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছিল তুর্কি বৃদ্ধ হুসেইন বারবার। সেখানে এই ডায়াবেটিস রোগীকে কাটাতে হয়েছে ১৮৭ ঘণ্টা। জীবন বাঁচাতে খেতে হয়েছে নিজের প্রস্রাব।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটি জানিয়েছেন হুসেইন।
চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষ পানি না খেয়ে কিছুদিন বাঁচতে পারে। তবে ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে ৬২ বছর বয়সে আহত অবস্থায় পাঁচদিনের বেশি বেঁচে থাকাটা অলৌকিক।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের হাতায় প্রদেশের আন্তাকিয়া শহরের ১৫তলা একটি ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন হুসেইন। ভূমিকম্পের পর একটি কেবিনেট ও ফ্রিজের ওপর আটকে যায় তার দেয়াল। সেখানে একটি চেয়ারের ওপর বসে এক সপ্তাহের বেশি সময় ছিলেন তিনি।
এসময় হুসেইনের কাছে ছিল একটি পানির বোতলও, একসময় সেটি শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নিজের প্রস্রাব খেয়ে বাঁচতে হয় তার।
মঙ্গলবার উদ্ধারের পর হুসেইনকে তার বাড়ি থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেরসিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হুসেইন বলেন, দ্বিতীয় ভূমিকম্পে আমার সিলিং ভেঙে পড়ে, তবে তাতেও আমার ক্ষতি হয়নি। দেয়ালটি পড়ে ফ্রিজ ও কেবিনেটের ওপর আটকে ছিল। সেখানে একটি কম্বল ছিল, পাশেই ছিল একটি চেয়ার। আমি কোনোরকমে কম্বল জড়িয়ে সেটির ওপরে গিয়ে বসেছিলাম।
ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থাকা সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে হুসেইন বলেন, আমি চিৎকার করছিলাম। এতে আমার গলা ব্যথা হয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর আমি বোতলের পানি শেষ করে ফেলি। পরে সেটির মধ্যে প্রস্রাব করে খেতে থাকি। যখন ঠান্ডা লাগত তখনই খেতাম। এটা খেয়েই আমার প্রাণ বেঁচেছে।
এ নিয়ে মেরসিন হাসপাতালের চিকিৎসক দেনিজ গেজের বলেন, বেঁচে থাকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ঠান্ডা। প্রস্রাব কখনোই পানির বিকল্প হতে পারে না কারণ এতে মানব দেহের বর্জ্য থাকে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের ভূমিকম্পে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ১৮৭। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়ায় ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৫ হাজার ৮১৪ জন।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দুই দেশে ১১তম দিনেও চলছে উদ্ধার তৎপরতা।