সময় যত গড়াচ্ছে ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশাও তত ক্ষীণ হয়ে আসছে তুরস্ক ও সিরিয়ায়। এখনও অনেকেই অপেক্ষায় আছেন স্বজনের, তবে সেই অপেক্ষায় কখনও ফুরাবে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
গত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ওই দুই দেশে এরই মধ্যে মৃত্যু ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আরও মরদেহ উদ্ধারেরও সম্ভাবনা দেখছেন উদ্ধারকারী কর্মীরা। কিন্তু প্রাণ নিয়ে টিকে থাকা মানুষের আশা তারা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘তুরস্কে ভূমিকম্পে উদ্ধারে ধীরগতি, মানুষের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ।’
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি কাহরামানমারাসে বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধারকারীদের তৎপরতা কমেছে। সিরিয়ার কয়েকটি এলাকার অবস্থাও প্রায় একই।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, ১০ লাখের বেশি মানুষ ঘরহারা মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ৮০ হাজারে বেশি মানুষ।
বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার হওয়া জীবিত মানুষের সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকেই ভিড় করছেন ধ্বংসস্তূপের কাছে। আশায় আছেন তারা।
তুরস্কের একটি বিধ্বস্ত ভবনের সামনে বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা ছোনার জামির বলেন, শুক্রবারও অনেকে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। তবে আর আশা নেই।
হাসান কুন্দুরু নামের একজন বলেন, কোনও উদ্ধারকারী নেই। আমরা নিজেরাই উদ্ধার কাজ চালাচ্ছি।
দুই দেশে ২৫ হাজার ৪০১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে সিএনএন। মৃতের সংখ্যা আরও বাাড়তে পারে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তুরস্কে মারা গেছেন ২১ হাজার ৪৮৪ জন। আহত হয়েছেন ৮০ হাজার ১০৪ জন।
আর সিরিয়ায় স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ৫৫৩। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৮ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের এখন খাদ্য সহয়তা দরকার বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, যার উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাস প্রদেশের পাজারসিক জেলায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থার তথ্যমতে, প্রথমে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এরপর অন্তত ১০০ বার কেঁপে ওঠে (আফটার শক) এ দুই দেশ। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল পরদিন দুপুর দেড়াটার দিকে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি।
ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে হাজারো বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দু দেশের হাজার হাজার মানুষ আহত হন; গৃহহীন হয়ে পড়েন অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাজে আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় রসদ ও ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় প্রবেশে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
এদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায়ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমোদন দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার।
তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানোর লক্ষ্যে আরও দুটি রুট তৈরির কাজ করছে দেশটি।
এরমধ্যে দুই দেশেই উদ্ধারের ক্ষেত্রে অলৌকিক ঘটনাও ঘটেছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার ১০০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে অনেককে।