‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ নামক আর্দ্রতার চ্যানেলগুলো বর্তমানে হাওয়াইয়ের উত্তরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আকাশ থেকে মধ্য ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত পশ্চিম উপকূল বরাবর এগুচ্ছে। এই আর্দ্রতাগুচ্ছের কেন্দ্রটি প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ মাইল (৩২০-৪৮০ কি.মি) প্রশস্ত।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিমে এই অবস্থার কারণে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে উপকূলে অবিরাম মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে। এতে অনেক এলাকায় তীব্র বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’
আমাদের বায়ুমণ্ডলে বয়ে চলা সুদীর্ঘ এবং বিপুল জলীয় বাষ্পের খরস্রোতা প্রবাহকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী বলা হয়।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) অনুসারে, বায়ুমণ্ডলীয় নদী আয়তনে প্রায় তিনশ মাইল প্রশস্ত এবং প্রায় এক হাজার মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। মানে এই ‘নদীর’ জলীয় বাষ্প যদি একত্র করা হয়, তাহলে সেটি আমাজন এবং নীল নদের পানির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে।
যখন বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো স্থলভাগে পৌঁছায়, তারা প্রায়ই বৃষ্টি বা তুষার আকারে জলীয় বাষ্পগুলোকে ছেড়ে দেয়। এনওএএ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশই আসে এই ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো’ থেকে।
‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ কি বিপজ্জনক?
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ একটি সাধারণ ঘটনা। সাধারণত এগুলো বড় কোনো বিপদ ডেকে আনে না।
দুর্বল ঝড় পানি সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টির যোগান দেয়। এসব ঝড় ক্যালিফোর্নিয়ার পর্বতগুলোয় তুষার বাড়াতেও সাহায্য করে। এ থেকে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ পানির চাহিদা মেটে।
‘বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো’ কতটা আর্দ্রতা গ্রীষ্মমন্ডল থেকে মধ্য-অক্ষাংশে নিয়ে আসে তার উপর ভিত্তি করে এগুলোকে ১-৫ স্কেলে র্যাঙ্ক করা হয়েছে।
এনওএএ বলছে, ক্যাটাগরি ৪ বা ৫ ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর ফলে মারাত্মক বন্যা হতে পারে, ঘটতে পারে কাদাধস। পাশাপাশি জীবন ও সম্পত্তির বিপর্যয়কর ক্ষতির কারণ হতে পারে ক্যাটাগরি ৪ বা ৫।
সেন্টার ফর ওয়েস্টার্ন ওয়েদার অ্যান্ড ওয়াটার এক্সট্রিমস এই ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ ইভেন্টটিকে লেভেল ৪ হিসেবে স্থান দিয়েছে; যা ‘চরম’ আর্দ্রতা নিয়ে আসে।
চলতি সপ্তাহে পশ্চিম উপকূলকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে
‘বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর’ ফলে সোমবার রাত থেকে সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্যা এবং গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ার অসংখ্য খবর পাওয়া গেছে।
সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অংশে ইতোমধ্যেই পাঁচ ইঞ্চির বেশি (১২.৭ সে.মি) বৃষ্টি হয়েছে। প্যাসিফিক গ্যাস অ্যান্ড ইলেকট্রিকের ওয়েবসাইট নর্থ ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে অসংখ্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে পশ্চিম উপকূলে আরেকটি ‘বায়ুমণ্ডলীয় নদী’ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এটি আরও ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার হুমকি নিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে, সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালায় কয়েক ফুট তুষারপাতের সম্ভাবনা করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের কিছু অংশে ইতোমধ্যে তুষারপাতের সতর্কতা জারি হয়েছে।
এসবের মাঝেও কিছুটা স্বস্তির খবর আছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টি এবং তুষারপাত আশির্বাদ হতে পারে খরা-কবলিত অঞ্চলগুলোয়। আশা করা হচ্ছে, এমনটা ঘটলে সম্ভাব্য শুষ্ক মাসগুলোর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারবে সংশ্লিষ্টরা।