বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংকটে থাকা আর্জেন্টিনাকে এক করেছে ফুটবল

  •    
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৪৭

বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর পরই অর্থনৈতিক সংকটকে পেছনে ফেলে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রোববার থেকে আকাশী-সাদা জার্সিতে উদযাপন শুরু হয় সাড়ে ৪ কোটি জনগণের দেশ আর্জেন্টিনায়।

৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপার খরা ঘুচিয়েছেন লিওনেল মেসি ও তার সতীর্থরা। বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাওয়ার পাশপাশি অর্থনৈতিক সংকটে থাকা একটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন তারা।

বছরের পর বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট আর্জেন্টিনার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র্যতার মধ্যে বাস করছে। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষের সঞ্চয় এবং ক্রয়ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে।

বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর পরই অর্থনৈতিক সংকটকে পেছনে ফেলে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রোববার থেকে আকাশী-সাদা জার্সিতে উদযাপন শুরু হয় সাড়ে ৪ কোটি জনগণের দেশ আর্জেন্টিনায়। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এই উচ্ছ্বাস বেশিদিন স্থায়ী হবে না।

আর্জেন্টাইন সমাজবিজ্ঞানি রদ্রিগো দাসকাল এএফপিকে বলেন, ‘খেলাধুলা বিশেষ করে আর্জেন্টিনার ফুটবল আবেগের মাধ্যমে আমাদের একত্রিত করার ক্ষমতা রাখে। এটি জাতীয়তার প্রতীক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে এই নয় যে এটি অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও কাজে দেবে। ’

অর্জনের আরও অনেক কিছু বাকি

আর্জেন্টিনার স্থানীয় ফুটবল দল বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেটের সমর্থকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোববার ফাইনাল ম্যাচের দিন খেলা উদযাপন করেছেন। দলদুটি একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।

এ নিয়ে আর্জেন্টাইন দলের লেফট ব্যাক নিকোলাস তালিয়াফিকো বলেন, ‘আশা করি এই আবেগ ও ঐক্য, ভবিষ্যতের জন্য একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করবে।’

দল সাফল্য পাওয়ার পর কিছু আর্জেন্টাইনের মধ্যেও জাতির ঐক্য নিয়ে আশা সঞ্চার হয়েছে।

৫০ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন নাগরিক হুলিও বেরদুন বলেন, ‘এই জয় আমাদের সমস্যাকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য নয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একত্রিত হতে পারি।’

৬৫ বছরের আর্জেন্টাইন স্থপতি রিকার্দো গ্রুনফেলদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এর বেশি কিছু না। আমাকে কাজে যেতে হবে। সবাইকে কাজে যেতে হবে। পরিস্থিতি বদলাবে না। সবসময় একই রকম থাকবে। শুধু খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।’

জনগণের জন্য খেলছি

বিশ্বকাপে মেসির প্রতিভা ও তার সতীর্থদের দক্ষতা ও কোচ লিওনেল স্কালোনির আনন্দ অশ্রু আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করেছে।

এ নিয়ে আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি বলেন, ‘এই দলটি মানুষের জন্য খেলে। আর্জেন্টিনার ভক্তদের জন্য খেলে। এখানে কোনো স্বতন্ত্র অহংকার নেই। সবাই দলের জন্য ও দেশের জন্য খেলে।’

আর্জেন্টিনার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেস ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্তিনা ফার্নান্দেস দে কির্শনারের মধ্যেও বিরোধ রয়েছে।

এ নিয়ে আর্জেন্টাইন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কার্লোস ফারা বলেন, ‘এই ফাটল নিয়ে সমাজ খুবই ক্লান্ত। জনগণ এটিকে ব্যবসা ও উন্নয়নের অন্তরায় বলে মনে করেন। আমি রাজনীতিতে ম্যাচ জয়ের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। সম্ভবত, উচ্ছ্বাস কেটে যাওয়ার পরে ব্যাপারগুলো আবার একই হবে। অর্থনৈতিক সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী। বিশ্বকাপ জয় এটি কমাতে পারে না।’

রাজনীতি থেকে দূরে আর্জেন্টিনা দল

খেলাধুলাকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) ফুটবলারদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পরিদর্শনের অনুষ্ঠানটি বাতিল করেছে।

১৯৮৬ সালের ডিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। তিনি দেশটির বামপন্থীদের সমর্থন করতেন, তবে বর্তমান আর্জেন্টাইন দল এমন নয়।

একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করা ৫০ বছর বয়সী লুক্রেসিয়া আরালদি বলেন, ‘ম্যারাডোনা রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও এই দলের খেলোয়াড়রা তা নয়। তারা পতাকা বহন করছে। তারা সবার প্রতিনিধিত্ব করছে। এটা দারুণ।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক শক্তি আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের গৌরবকে পুঁজি করার চেষ্টা করবে না।

এ বিভাগের আরো খবর