বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুক্তরাজ্য উত্তাল কেন

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৩৪

যুক্তরাজ্যে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা আর রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মন্দা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক আন্দোলন চলছে।

দেশটির নাগরিকদের এ অসন্তোষ অদূর ভবিষ্যতে শেষ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি বছরের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ, যা দেশটির গত ৪১ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে।

বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে ধর্মঘটে নার্সরা

যুক্তরাজ্যের ১০৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করছেন নার্সরা।

নার্সদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিংয়ের (আরসিএন) ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এতে যোগ দেন ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের লক্ষাধিক নার্স।

এ ধর্মঘটের কারণে সার্জারি এবং অন্যান্য চিকিৎসাসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা কেমোথেরাপি, ডায়ালাইসিস এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আরসিএনের প্রধান প্যাট কুলেন বলেন, ‘নার্সিংয়ের জন্য একটি দুঃখজনক দিন এটি, রোগীদের জন্য করুণ দিন।’

এই ধর্মঘট থামাতে যুক্তরাজ্য সরকারকে বছর শেষের আগেই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান কুলেন।

নার্সদের দাবি ১৯ শতাংশ বেতন বাড়ানোর, তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, তাদের পক্ষে এ বেতন দেয়া সম্ভব নয়।

স্কটল্যান্ডে সরকারের প্রস্তাবিত নতুন বেতন-ভাতার চুক্তি প্রকাশ হওয়ার পর ধর্মঘট স্থগিত করেছেন নার্সরা। এ চুক্তিতে তারা ভোট দেবেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ভোটের ফল জানা যাবে।

রেলওয়ের সেবা বিপর্যস্ত

যুক্তরাজ্যে রেলওয়ের কর্মীরাও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে চাকরি ছাঁটাই বন্ধেরও নিশ্চয়তা চেয়েছেন তারা।

দেশটির সবচেয়ে বড় রেল ইউনিয়ন দ্য রেল, মেরিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (আরএমটি) চলতি বছরের ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ছাড়া আগামী বছরের ৩, ৪, ৬ ও ৭ জানুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইউনিয়নটি।

ব্রিটেনের বেশির ভাগ রেল নেটওয়ার্ক দেখভাল করে নেটওয়ার্ক রেল। উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রেন কমে যাওয়ার বিষয়ে সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের শুধু প্রয়োজন হলেই ভ্রমণ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বুধবার ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর রেলের কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছে আরএমটি।

আন্দোলন নিয়ে আরএমটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘এটা স্পষ্ট যে সরকার সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে।’

নেটওয়ার্ক রেলের কর্মকর্তা টিম শোভেলার বলেন, ‘রেলওয়ে যে একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে ধর্মঘট এ সংকটকে আরও বড় করে তোলার পাশাপাশি সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে।’

ডাক বিভাগের কর্মীরাও ধর্মঘটে

আসছে বড়দিনে সময়মতো উপহার নাও পেতে পারেন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা। কারণ যেসব কর্মী এই উপহার পৌঁছে দেবেন, তারাই বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে করছেন আন্দোলন।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রয়্যাল মেইল কর্মীদের ইউনিয়ন দ্য কমিউনিকেশন ওয়ার্কার্স।

রয়্যাল মেইল হলো ব্রিটিশ সরকারের পোস্টাল সার্ভিস, যা ১৫১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সংস্থাটি জানিয়েছে, কর্মীদের আন্দোলনের কারণে তাদের সেবায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে।

পরিষেবা চালু রাখতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। অন্যান্য খাতেও আন্দোলন

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বিমানবন্দরকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সচালক, বাসচালক, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, আবহাওয়াবিদ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, মহসড়ককর্মীরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরগুলোতে পাসপোর্ট চেক করা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বড়দিন ও নতুন বছরের আগে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ড্রাইভিং পরীক্ষকরা চাকরির নিরাপত্তা ও ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের বন্দর শ্রমিকরাও পারিশ্রমিক চুক্তি নিয়ে ধর্মঘট করছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সাফোকের ফেলিক্সস্টো বন্দরে ইউনাইটেড ইউনিয়নের সদস্যরা বেতন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পর ওয়াক আউট করেছিলেন। নভেম্বরে পারিশ্রমিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন লিভারপুল বন্দরের শ্রমিকরা।

কী বলছে যুক্তরাজ্য সরকার

যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে চলতি বছরের অক্টোবরে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, ধর্মঘটের প্রভাব কমাতে কাজ করছে তার সরকার।

সুনাক এমপিদের জানিয়েছেন, সরকার ধর্মঘটের কারণে সৃষ্ট অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করছে, তবে এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো ইউনিয়নগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনা।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান নাদিম জাহাবি রয়টার্সকে জানান, রাষ্ট্রীয় কর্মীরা বিক্ষোভ বন্ধ না করলে বড়দিনের আগে সেনা মোতায়েন হতে পারে যুক্তরাজ্যে।

দেশটির বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে না।

যুক্তরাজ্যে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা আর রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মন্দা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর