ইরানে নারীদের পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলা বিক্ষোভে সমর্থন দেয়ায় দেশটির চিকিৎসক, র্যাপ শিল্পী ও এক ফুটবলারসহ প্রায় ২৪ জন তরুণ ফাঁসির ঝুঁকিতে রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলা বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে ২৩ বছর বয়সী মোহসেন শেকারি ও মাজেদরেজা রাহনাভার্দকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কঠোর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নিলে এভাবে আরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। এরই মধ্যে বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরও এক ডজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মতো অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি না হলে আমরা গণহত্যার মুখোমুখি হব। মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানো এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভ থামাতে এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে ইরান সরকার।’
সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন থেকেই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে। বিক্ষোভে সমর্থন দেয়া দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও ইরানে বিক্ষোভ এখনও চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজতন্ত্রকে উৎখাত করার মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়। এ বিপ্লবের চার বছর পর ইরানে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়।
ইরান সরকার বলছে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা দাঙ্গাকারী। তাদের শরিয়াহ আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। অবিচার ও অত্যাচার
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরানে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সেই সঙ্গে আরও ৯ জনকে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া হতে পারে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাহান্দ নুরমোহাম্মদ-জাদেহ নামের এক তরুণকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছে, যিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, অভিযুক্ত ওই তরুণ হাইওয়ের রেলিং ভাঙা, ডাস্টবিন, টায়ারে আগুন লাগানো ছাড়া আর কোনো অপরাধ করেননি। অ্যামনেস্টি জানায়, বিক্ষোভে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেন ২২ বছরের মোহাম্মদ ঘোবদলু। এ ঘটনায় একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। ঘোবদলুকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে ইরানের আদালত। তাকে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তিনবার ফাঁকা গুলি চালানোয় কুর্দিশ র্যাপার সামান সায়দিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভে নিহত একজনের শেষকৃত্যে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন চিকিৎসক হামিদ ঘরে-হাসানলু ও তার স্ত্রী ফারজানেহ ঘরে-হাসানলু। এ সময় তাদের আটক করে নিয়ে যায় আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ সদস্যরা।
পরে হামিদ ঘরে-হাসানলুকে মৃত্যুদণ্ড ও তার স্ত্রীকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ইরানের পেশাদার ফুটবলার আমির নাসর-আজাদানি। ছবি: সংগৃহীত
সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ইরানের পেশাদার ফুটবলার আমির নাসর-আজাদানিকে। এমন খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ফুটবলারদের ইউনিয়ন ফিফপ্রো। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে অবিলম্বে আজাদানির শাস্তি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে।যেকোনো সময় ফাঁসি
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, কম সময়ের নোটিশে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।
রাহনাওয়ার্দকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাত্র ২৩ দিন আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কয়েক দিন আগে মায়ের সঙ্গে রাহনাওয়ার্দকের শেষ দেখা হয়, তবে শেকারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে তার বিষয়ে জানতেন না অ্যাক্টিভিস্টরা।
২৩ বছর বয়সী মাজেদরেজা রেহনাভার্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হয়। ছবি: বিবিসি
অ্যামনেস্টি বলছে, যেসব মানুষের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রকাশ্যে আসেনি, তাদের যেকোনো সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
এ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইরানে বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড ভয়ংকর। আমরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।’