নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলা বিক্ষোভে অংশ নেয়ার দায়ে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, দণ্ডপ্রাপ্তের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দেয়া এবং ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তেহরানের রেভল্যুশনারি কোর্টে।
এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঁচজনকে ৫-১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আরেকটি আদালত।
ইরান সরকারের এমন আচরণে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা সতর্ক করে বলছে, ‘তাড়াতাড়ি মৃত্যুদণ্ড’ দেয়ার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস সরকারি প্রতিবেদনের বরাতে বলছে, কমপক্ষে ২০ জন বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন।
সংস্থাটির পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার নিতে হবে। বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিণতি সম্পর্কে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে।’
কঠোর হিজাব নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার এক তরুণী গত ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। মাহসা আমিনি নামে ওই কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে, সেদিনই ইরানের কট্টর শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ জনগণ।
দ্রুত প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে। বর্তমানে ১৪০টি শহর ও গ্রামে তুমুল বিক্ষোভ চলছে; যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
ইরানের মানবাধিকার সংস্থার মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন অভিযানে ৪৩ শিশু ও ২৫ নারীসহ অন্তত ৩২৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাহসা আমিনির মৃত্যু হয়
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) অবশ্য বলছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৩৩৯। আটক আছেন ১৫ হাজার ৩০০ বিক্ষোভকারী। বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় ৩৯ জন নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
Daily Statistics on Iran Protests#Iran#Mahsa_Amini#HumanRights#IranRevoIution#مهساامینی pic.twitter.com/7TWUGn0orP
— HRANA English (@HRANA_English) November 13, 2022চলমান বিক্ষোভকে বিদেশি শত্রুদের দ্বারা প্ররোচিত ‘দাঙ্গা’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন ইরানের শাসকরা। বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেন মোহসেনি ইজেই গত সপ্তাহে জানান, মূল অপরাধীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিহ্নিত করা উচিত। তারপর দ্রুত সাজা দিতে হবে। এ থেকে অন্যরা শিক্ষা পাবে।
সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন, ‘দাঙ্গাকারীদের’ বিরুদ্ধে ‘মোহারেবেহ’ (ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতা), ‘এফসাদ ফিল-আরজ’ (পৃথিবীতে দুর্নীতি) এবং ‘বাগি’ (সশস্ত্র বিদ্রোহ)-এর অভিযোগ আনা হতে পারে। শরিয়া আইনে সবগুলো অভিযোগের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
- আরও পড়ুন: ইরানি শাসকরা কি পতনের মুখে?
ইরানের বিচার বিভাগ বলছে, সাম্প্রতিক দাঙ্গায় অংশ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ২ হাজারের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রোববার স্থানীয় মিডিয়াগুলো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমোজগানে ১৬৪, কেন্দ্রীয় প্রদেশ মারকাজিতে ২৭৬ এবং প্রতিবেশী ইস্ফাহান প্রদেশে ৩১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।