পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খান ও তার সন্তানদের নিরাপত্তা জোরদার করেছে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক সরকার। কমান্ডোদের বিশেষ একটি স্কোয়াড নিরাপত্তা দেবে ইমরানের পরিবারকে।
আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদমুখী লং মার্চ চলার সময় ৩ অক্টোবর পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ এলাকায় বন্দুক হামলা হয় ইমরানের ওপর। ডান পায়ে গুলি লাগলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের কারণে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এই পাঞ্জাব প্রদেশে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জোট সরকার রয়েছে। তার পরও হামলা ঠেকানো যায়নি। এ কারণে হয়তো পাঞ্জাব পুলিশকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না পিটিআই।
পিটিআই জানায়, শুক্রবার কেপি পুলিশের কমান্ডোদের একটি বিশেষ স্কোয়াড ইমরান খান এবং তার ছেলেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। কমান্ডোরা খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি) প্রাদেশিক পুলিশের অন্তর্গত।
ইমরানের বাস ভবন লাহোরের জামান পার্কেরও নিরাপত্তা জোরদার করেছে পাঞ্জাব পুলিশ। বাড়ির বাইরে বালুর বস্তা ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে নিরাপত্তাচৌকি তৈরি করেছে তারা। এ ছাড়া বাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়ার পথেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রয়েছে নিরাপত্তা ক্যামেরা। দর্শনার্থীদের রেকর্ড রাখার জন্য একটি বিশেষ ডেস্কও স্থাপন করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর স্বরাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ সহকারী ওমর সরফরাজ চিমা বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যে ইমরান খানের জীবনের হুমকিতে। তাই তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
‘ইমরান খানের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।’
এদিকে বাবার ওপর হামলার খবরে তাকে দেখতে পাকিস্তান ছুটে এসেছেন ইমরান খানের দুই ছেলে সুলেমান খান ও কাসিম খান। ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন ২৫ বছরের সুলেমান এবং ২৩ বছরের কাসিম। লাহোর বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার তাদের স্বাগত জানান পাঞ্জাবের মন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা মিয়ান আসলাম ইকবাল। জামান পার্কে তারা অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
২৫ বছরের সুলেমান এবং ২৩ বছরের কাসিমের সঙ্গে ইমরান খান
ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে শুক্রবার লং মার্চে ভাষণ দেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কোরেশির নেতৃত্বে লং মার্চ বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদ থেকে আবার শুরু হয়েছে। এই স্থানেই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
লাহোর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে টোবা টেক সিং এলাকায় শুক্রবার সমাবেশ করে পিটিআই। দলের প্রধানের ওপর হত্যাচেষ্টায় হাই-প্রোফাইল সন্দেহভাজনের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করায় শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় ইমরানের সমর্থকরা। এই তিন সন্দেহভাজন হলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং আইএসআই (রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির।
ভিডিও লিঙ্কে যুক্ত হয়ে ইমরান সমর্থকদের বলেন, ‘মনে রাখবেন... আমরা যদি গরুর মতো কাজ করি, তাহলে আল্লাহ আমাদের এভাবেই থাকতে দেবেন। জাতি হিসেবে সবাই ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পায় না।
এ সময় আবারও ‘মেধার ভিত্তিতে’ নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের দাবি জানান ইমরান খান। পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ ২৯ নভেম্বর শেষ হতে চলেছে।’
ইমরান বলেন, ‘শরিফ ও জারদারি তাদের পছন্দের সেনাপ্রধানকে ‘তাদের লুট করা অর্থ’ রক্ষা করতে বলেছিলেন। তারা আরও চুরি করতে চেয়েছিলেন।’
ঘোষিত অপরাধী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সমালোচনা করেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘এটি করে প্রধানমন্ত্রী সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করেছে। এটি তার শপথের লঙ্ঘনও বটে।’
জেনারেল বাজওয়াকে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ইমরান খান।
তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করা উচিত।’
পাকিস্তানে আইনের শাসন নেই দাবি করে ইমরান বলেন, ‘একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমি একটি এফআইআর নথিভুক্ত করতে পারি না। কারণ আমি এতে একজন শক্তিশালী ব্যক্তির (আইএসআই-এর মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির) নাম দিয়েছি। আসলে আইনের শাসন ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না।’