বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অস্থির তেলের বাজারে বিপি ফুলে-ফেঁপে লাল

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২২ ২৩:৫৪

কোভিড লকডাউনের পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাজার বিশ্লেষকরা আশা করছিলেন, এই তিন মাসে বিপি ৫৩০ কোটি পাউন্ড পর্যন্ত মুনাফা করতে পারে। মঙ্গলবার বিপি জানায়, গত তিন মাসে তারা ৭১০ কোটি পাউন্ড মুনাফা করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি সংকটে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। সরবরাহ কমে যাওয়ায় জ্বালানির দাম আকাশে ঠেকেছে। এতে আসন্ন শীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য চরম ভোগান্তির মুখে আছেন ইউরোপের নাগরিকরা। আর এসবের মধ্যেই বিপুল মুনাফার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশভিত্তিক তেল জায়ান্ট-বিপি। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গত তিন মাসে তারা ৭১০ কোটি পাউন্ড মুনাফা করেছে।

কোভিড লকডাউনের পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাজার বিশ্লেষকরা আশা করছিলেন, এই তিন মাসে বিপি ৫৩০ কোটি পাউন্ড পর্যন্ত মুনাফা করতে পারে।

বিপি বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের মুনাফা ২৯০ কোটি পাউন্ড বেশি হয়েছে; যা দ্বিগুণেরও বেশি।

জ্বালানি এবং গ্যাস উৎপাদনকারী জায়ান্ট বিপি জানায়, চলতি বছর উইন্ডফলের অধীনে সরকারকে তারা ২২০ কোটি পাউন্ড ট্যাক্স দেবে। তবে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় এবার মুনাফা কম হয়েছে।

বিপির মুনাফা কমে যাওয়ায় ব্রিটিশ জনগণের কিছু আসে যায় না। কারণ গত বছরের এই সময়ের চেয়ে তারা লিটারে ২০ সেন্ট বেশিতে গ্যাস ও পেট্রল কিনছে।

বিপির এমন ঘোষণার পর, কনজারভেটিভ সরকারকে একহাত নিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। তারা বলছে, ‘উপযুক্ত’ উইন্ডফল ট্যাক্স ধার্যে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিফলন এই পরিসংখ্যান।

তবে লেবারদের অভিযোগ মানতে রাজি নন বিপির প্রধান নির্বাহী বার্নার্ড লুনি। তিনি বলেন, ‘ত্রৈমাসিকের ফলাফল এটাই প্রমাণ করছে, পরিবর্তনের মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

‘আমরা আজও বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী তেল এবং গ্যাস সরবরাহ করছি। একই সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগও করছি।’

বিপি নিশ্চিত করছে যে তারা শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বেশি মুনাফা দেবে। সেই সঙ্গে শেয়ার কেনার জন্য তারা ২২০ কোটি পাউন্ড খরচ করবে।

জ্বালানি জায়ান্ট আরও জানায়, চলতি বছর তারা ইউকে উইন্ডফল ট্যাক্স দেবে। উত্তর সাগরের তেল ও গ্যাস উৎপাদকদের জন্য মে মাসে জ্বালানির মুনাফা ধার্য উইন্ডফল ট্যাক্স চালু করে ব্রিটিশ সরকার।

শেয়ারহোল্ডারদের বিপি জানিয়েছে, ২০২২ সালে তারা উত্তর সাগরে ব্যবসার জন্য ২২০ কোটি পাউন্ড ট্যাক্স দেবে সরকারকে। যার মধ্যে ৬৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড জ্বালানি মুনাফা ধার্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

অন্যদিকে বিপির প্রতিদ্বন্দ্বী শেল বলছে, গ্যাসের দাম বেশি থাকার কারণে তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিকের সমন্বয়কৃত আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ৮২০ কোটি পাউন্ড হয়েছে।

জুনে অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের ব্যারেল ছিল ১১৪ ডলারের কাছাকাছি। তবে জুলাইয়ের শুরু থেকে অংকটা ১০০ ডলারের উপরে খুব কমই উঠেছে। মঙ্গলবার থেকে অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের জন্য গ্রাহককে গুনতে হবে প্রায় ৯৪ ডলার।

এদিকে তেল জায়ান্ট সৌদি আরামকো বলছে, তিন মাসে তারা ৪২৪ কোটি ডলার মুনাফা করেছে।

বিপির মুনাফা ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশবাদীরা। উইন্ডফল ট্যাক্স আরও বাড়াতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ নামে একটি সংগঠন।

জ্বালানি প্রচারক সানা ইউসুফ বলেন, ‘অর্থনীতি ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির খরচ বাড়ছে, জলবায়ু সংকট গভীর হচ্ছে। ঋষি সুনাককে অবশ্যই বেশি মুনাফার বিনিময়ে কাজ করতে হবে।

‘বিশাল এবং কার্যকর উইন্ডফল ট্যাক্স আরোপ করা এখন সময়ের দাবি।’

আইপিপিআর থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সেন্টার ফর ইকোনমিক জাস্টিস-এর প্রধান জর্জ ডিব বলেন, ‘বিপির মতো কোম্পানিগুলো প্রচুর মুনাফা করছে এবং শেয়ার বাইব্যাক স্কিমের মাধ্যমে মুনাফা সরাসরি ধনী শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

‘ভোক্তাদের জন্য খরচ কমানো বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করার পরিবর্তে জীবাশ্ম জ্বালানি জায়ান্টগুলো শেয়ারহোল্ডারদেরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

ছায়া জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড বলেন, ‘বিপির মুনাফা এটাই প্রমাণ করেছে যে সঠিক উইন্ডফল ট্যাক্স ধার্য করতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

‘ঋষি সুনাকের লজ্জায় মুখ লুকানো উচিত। ব্রিটিশ জনগণ যখন জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তখন তার সরকার উইন্ডফলের মুনাফা তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর পকেটে গুঁজে দিচ্ছেন।’

জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত ভবিষ্যত গড়ায় কাজ করা প্রতিষ্ঠান আপলিফ্টের পরিচালক টেসা খান। তিনি বলেন, ‘বিপির ক্রমবর্ধমান মুনাফা অন্য কোনো কারণে নয়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ায় তারা মুনাফা করেছে। ’

‘বিপি নিশ্চয়ই ব্যাংকে গিয়ে হাসছে। তাদের মতো তেল ও গ্যাস জায়ান্টরা যখন এই ‘আজব’ মুনাফা করছে, তখন যুক্তরাজ্যের ৭০ লাখ পরিবার আসন্ন শীতে তীব্র জ্বালানি সংকটে রয়েছে।

‘সরকারকে অবশ্যই হাত গুটিয়ে বসে থাকা বন্ধ করতে হবে। পরিবারগুলোকে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এই অর্থের কিছু ফেরত দিতে হবে।’

ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় ইতোমধ্যে ভুগছে ব্রিটিশরা। বড় দিনের আগে এই দাম সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর