দায়িত্ব নেয়ার ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। এর মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকার তকমা জুটল ট্রাসের কপালে। ডাউনিং স্ট্রিটে নিজ কার্যালয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার পদত্যাগের কথা জানান ট্রাস।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হয়েও সরকার গঠনে ম্যান্ডেট অর্জন করতে পারিনি। রাজাকে আমার পদত্যাগ করার বিষয়টি জানিয়েছি।’
এ সময় ট্রাস স্বীকার করেন, কনজারভেটিভ নেতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এতে দলের মধ্যে আস্থা হারিয়েছেন তিনি।
ট্রাস বলেন, ‘যে ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছি, আমি তা পূরণ করতে পারিনি। তাই মহামহিম রাজার সঙ্গে কথা বলেছি; তাকে অবহিত করেছি যে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে পদত্যাগ করছি আমি।’
আগামী সপ্তাহের মধ্যে কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্ব প্রশ্নে ভোট হবে। নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন ট্রাস।
- আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস
বিবিসির খবরে বলা হয়, ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে পদত্যাগের আগে দেখা করেছিলেন ট্রাস। সেখানে অনেক টোরি তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের পদত্যাগ এবং তার উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে হট্টগোলে নতুন করে চাপে পড়েছিল ট্রাসের প্রধানমন্ত্রীত্ব। বুধবার সন্ধ্যায় ভোট ঘিরে প্রবল ক্ষোভের সৃষ্টি হয় কনজারভেটিভদের মধ্যে।
Liz Truss joins ranks of shortest-serving world leaders https://t.co/3IIwT4bRBQ
— The Guardian (@guardian) October 20, 2022কনজারভেটিভ পার্টির ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্র্যাডি বলেন, ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ২৮ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত।
এদিকে বিরোধী লেবার পার্টি অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। বিরোধী নেতা স্যার কির স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘টোরিরা ব্রিটিশ জনগণের সম্মতি ছাড়ায় এসব কর্মকাণ্ড চালাতে পারে না। আসলে আমাদের একটি সাধারণ নির্বাচন দরকার।
‘কনজারভেটিভ পার্টি প্রমাণ করেছে যে তাদের আর শাসন করার ম্যান্ডেট নেই।’
৪৭ বছর বয়সী ট্রাস পার্লামেন্টে আসেন ২০১০ সালে। চার বছর এমপি পদে থাকার পর মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন ট্রাস। দায়িত্ব পালন করেন ডেভিড ক্যামেরন সরকারের পরিবেশ, খাদ্য এবং গ্রামীণবিষয়ক সচিব হিসেবে।
পরে টেরিজা মে সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ট্রাস। ২০২১ সালে হন পররাষ্ট্র সচিব।
ট্রাস অবশ্য শুরু থেকেই রক্ষণশীল ছিলেন না। বামপন্থি মা-বাবার কাছে তার বেড়ে ওঠা। ছিলেন মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের কিশোরী সদস্য। মাত্র ১৯ বছর বয়সে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
- আরও পড়ুন: লিজ ট্রাসে থ্যাচারের ছায়া
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ নিয়ে ২০১৬ সালের জুনে হওয়া গণভোটে বরিস জনসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। ট্রাস চাইছিলেন ব্লকে থেকে যেতে।
৫ মে’র ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে প্রায় ২০ হাজার ভোটে হারিয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হন লিজ। তিনি পান ৮১ হাজার ৩২৬ ভোট; ঋষি সুনাকের পক্ষে যায় ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট।